ভাটারা থেকে ছাত্রের লাশ উদ্ধার : পরিবারের দাবি শ্বাসরোধে হত্যা

আগের সংবাদ

সেট টপে বড় বাণিজ্যের ধান্দা! : একচেটিয়া বাজারে জিম্মি হওয়ার শঙ্কা গ্রাহকের, নীতিমালা না করেই বেঁধে দেয়া হলো সময়

পরের সংবাদ

চিড়িয়াখানায় ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি অ্যানথ্রাক্স : অ্যানথ্রাক্সে সিংহীর মৃত্যু > খাবারের জন্য বাইরে থেকে আনা গরু জবাইয়ের আগে পরীক্ষার পরামর্শ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : মহামারি রোগ অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায়। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একটি আফ্রিকান সিংহীর। গত ২৫ জানুয়ারি সিংহীটি মারা গেলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রাখে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সিংহীটির। সুতরাং হইচই করার কিছু নেই। এমন কৌশল নিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে সিংহীটির মৃত্যুর বিষয়টি নিয়েও ছিল গড়িমসি। অবশ্য পরে তা স্বীকার করেন চিড়িয়াখানার পরিচালক।
সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাসেই চিড়িয়াখানার খাঁচার ভেতরে অ্যানথ্রাক্সেই মৃত্যু হয়েছিলো ২টি জিরাফের। ওই সময় জিরাফের মৃত্যুর বিষয়টিও আড়ালে রেখেই তড়িঘড়ি করে গোপনে অন্য জিরাফগুলোকে অ্যানথ্রাক্সের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ ভোরের কাগজকে বলেন, সিংহীটি অ্যানথ্রাক্সেই মারা গেছে। আজ (গতকাল) ভিসেরাঁর ল্যাব রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। তবে অন্য প্রানীর এখনো মৃত্যু ঝুঁকি নেই। আগাম সতর্কতায় কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি পশুর খাঁচায় প্রতিষেধক স্প্রে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফুডবার্থ করা হয়েছে, খাঁচার মাটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দর্শনার্থীদের খাঁচার কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না’।
তিনি বলেন, প্রথমে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ লেখা হয়েছিল। যার ফলে আসল কারণ আমরা ধরতে পারিনি। সিংহীটির সঙ্গী পুরুষ সিংহটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিংহটি সুস্থ আছে, তবে একটু বিষণ্ন। এ সময় কয়েকদিন আগে দুই জিরাফও মারা গেছে বলে জানান আব্দুল লতিফ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে আফ্রিকান সাদা সিংহটির। কখনো গুটিপায়ে

হেঁটে বেড়াচ্ছে। থাকছে চুপ করে বসে, কখনো বা থাকে শুয়ে। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে প্রায়। শরীর বেশ দুর্বল। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দৃঢ় গলায় বলছে, ১৬ বছর বয়েসি সিংহের স্বাভাবিক অসুস্থতা কেবল বার্ধক্যজনিত কারণে। তবে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি সঙ্গী হারানোর শোকে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছে বনের রাজা।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগার টগর ও বেলি জুটির প্রথম শাবক দুর্জয় আর অবন্তিকার মৃত্যু হয়। সেটসি ফ্লাই নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রিপানোসোমিয়াসিস রোগে তারা প্রাণ হারায়। সেই ঘটনাও জানাজানি হয়েছিল এক সপ্তাহ পর ২৯ নভেম্বর। তখন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছিল।
চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি সিংহীটি হঠাৎ মারা যায়। কোনো রোগ কিংবা অসুস্থতা ছিল না সিংহীটির। এর বয়স ছিল ১২ বছর। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে প্রাণী বিনিময়ের মাধ্যমে এটিকে আনা হয়েছিল।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবু হাদি নুর আলী খান বলেন, ভেসেরাল পরীক্ষা করে আমরা পেয়েছি, সিংহীটি অ্যানথ্রাক্স রোগেই মারা গেছে। চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের যে মাংস খেতে দেয়া হয় তা গরু বা বিভিন্ন প্রাণীর মাংস যা খোলা জায়গায় জবাই করা হয়। সেখান থেকে মারাত্মক অ্যানথ্রাক্স জীবাণু ঢুকতে পারে। যা খাদ্যের মাধ্যমে প্রাণির পাকস্থলিতে ঢুকে সংক্রমণ ঘটায় এবং খুব অল্প সময় প্রাণীটি মারা যায়।
পশু চিকিৎসকরা জানান, অ্যানথ্রাক্স একটি ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগ। এটি খুব দ্রুত ছড়ায় এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে। সংক্রমিত হওয়ার ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে আক্রান্ত প্রাণীর। জানতে চাইলে গবেষক ও পশু চিকিৎসক ডা. এ বি এম শহীদ উল্লাহ বলেন, অ্যানথ্রাক্স খুবই মারাত্মক ব্যাধি। এতে আক্রান্ত হলে প্রাণীর হঠাৎ করেই মৃত্যু হতে পারে অথবা অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণও প্রকাশের আগেও মৃত্যু হতে পারে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং সে কাঁপতে শুরু করবে। মুখ দিয়ে লালা ঝড়বে, শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাবে, তার খিঁচুনি হতে পারে এবং ধীরে ধীরে অচেতন হয়ে খুব অল্প সময়ের মধেই প্রাণীর মৃত্যু হবে। বেশির ভাগ সময়ে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণী মারা যাবে; চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ হবে না।
গবেষকরা বলছেন, চিড়িয়াখানায় মাংসাশি প্রাণীদের খাবারের জন্য যেসব গরু বাইরে থেকে আনা হয় জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সঠিক প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা না করলে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হতে পারে চিড়িয়াখানার মাংসাশি প্রাণীরা এবং হুমকির মুখে পড়তে পারে চিড়িয়াখানার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজ জামান বলেন, অ্যানথ্যাক্স খুব মারাত্মকভাবে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে যদি কোনো প্রাণী আক্রান্ত হয় তাহলে তার আশপাশের প্রাণীরাও আক্রান্ত হয়। এটা তিন ভাবে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে, খাবারের মাধ্যমে এবং এদের স্পোরের মাধ্যমে। এ কারনে চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের খাবার দেয়ার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা এবং প্রোটেকটিভ পোশাক পরে প্রাণীর কাছাকাছি যেতে হবে। এবং খাঁচা থেকে বের হয়েই সেই পোশাকগুলো খুলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মিরপুর চিড়িয়াখানার কর্মকতারা জানান, বিশ্বের আট প্রজাতির সিংহের মধ্যে মিরপুর চিড়িয়াখানায় তিনটি আফ্রিকান প্রজাতির এবং একটি এশীয় প্রজাতির সিংহ ছিল। তাদের মধ্যে সিংহ কেবল আফ্রিকান প্রজাতির একটি। গত বছরের মে মাসে পুরুষ সঙ্গীর অভাবে তিনটি সিংহীর মধ্যে ‘নেতিবাচক পরিবর্তন’ দেয়া যায়। সঙ্গীহীন প্রাণীদের স্বস্তি দিতে নানাভাবে চেষ্টা চালান তারা।
২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে চারটি সিংহ নিয়ে আসা হয় মিরপুর চিড়িয়াখানায়। এর মধ্যে দুটি সিংহ সাফারি পার্কে জন্মানো, বাকি দুটি সিংহী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা। মারা যাওয়া সিংহীটিও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়