কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

কর্মীদের দ্ব›েদ্বই মরছে বাঘ-জেব্রা! বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ১১ জেব্রা মৃত্যুর খবর নিতে এসে বেরিয়ে এসেছে বাঘ মৃত্যুর খবর। গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবিরের কাছে জেব্রা মৃত্যুর কারণ জানতে চান। পার্ক কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকার বিষয়টি সন্দেহ পোষণ করে জেব্রা হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পরে চলতি মাসে একটি বাঘেরও মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেন প্রকল্প পরিচালক।
পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামাগারে গতকাল রবিবার দুপুর ১টায় জেব্রা মৃত্যু নিয়ে গঠিত বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। এরপর সাংবাদিকদের বলেন, পার্কে জেব্রাগুলো মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় একে অপরকে ফাঁসানোর জন্য জেব্রাগুলো হত্যা করা হয়েছে বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসে সাফারি পার্কে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এটা কেউ জানে না। এত মূল্যবান প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে, অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষ তা না জানিয়ে গোপন করে রাখে। তিনি তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে বলেন, যাদের তত্ত্বাবধানে জেব্রা মারা গেছে তাদের স্বপদে বহাল রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। এতে পার্কের অন্য কর্মচারীরা মুখ খুলতে সাহস পাবে না। মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতর থেকে হাতির খাবার পাচার করা হয়ে থাকে। বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে তিনি বাঘ মৃত্যুর খবর পান। তিনি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটির সদস্যদের বলেন। এটি একটি হত্যার ঘটনা এবং ক্রিমিনাল অফেন্স। এজন্য তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করবেন বলে জানান।
পার্কে গত ১২ জানুয়ারি একটি পুরুষ বাঘ মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির বলেন, ওই বাঘের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাই কাউকে জানানো হয়নি। পার্কে মোট বাঘ ছিল ১০টি। এর মধ্যে একটি মারা গেল।
এ সময় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কর্মকর্তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটি প্রশাসনের ব্যাপার।
তদন্ত কমিটির যেসব সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন তারা হলেন- বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান।
প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রা মারা যায়। ওই ঘটনায় প্রাণী বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ২৩টি প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামগারে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিশেষ মেডিকেল বোর্ড মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে বলে জানান।

আর জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত দেয়ার লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পরে শনিবার আরো দুটি জেব্রা মারা যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা জেব্রা নানা সময়ে বংশ বিস্তারের পর এর সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিনগুণ অর্থাৎ ৩১টিতে দাঁড়ায়। ১১টি মৃত্যুর পর পার্কে এখন জেব্রা আছে ২০টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়