লাইসেন্স ছাড়াই ৭ বছর ট্রাক চালায় জসিম

আগের সংবাদ

ফাইভ-জিতে অনাগ্রহ কেন : তরঙ্গ নিলামের শর্ত ও নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি > ‘বুঝে-শুনে আগে বাড়তে চায় বেসরকারি অপারেটররা

পরের সংবাদ

ঢাকা ঘোষণায় শেষ এনসিডি সম্মেলন : স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসাসেবা দক্ষ জনবল বাড়ানোর সুপারিশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অসংক্রামক রোগের বোঝা কমাতে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের জীবনযাপন প্রণালি ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতায় জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এসব অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা সেবা, দক্ষ জনবল তৈরি এবং চিকিৎসা ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেন তারা।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এই সুপারিশ করেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ

হয় গত ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই সম্মেলন। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম (বিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম, আইসিডিডিআরবি, ব্র্যাক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পপুলার মেডিকেল কলেজসহ ৩০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে সহযোগিতা করেছে ইউনিসেফ, ইউএনএফপি, ওরবিজ ইন্টারন্যাশনাল, ট্রমা সেন্টার, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল, রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যাল, নোভিস্তা ফার্মাসিউটিক্যালসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সমাপনী দিনে বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ ফায়েজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ বি এম মাকসদুল আলম, ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম, বিএসএমএমইউর নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে অসংক্রামক রোগ বেশি। অসংক্রামক রোগ যেহেতু সংক্রামক রোগের মতো চমক সৃষ্টি করতে পারে না, সে কারণে রোগীরা অবহেলিত থেকেই যায়। এসব রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার পর অর্থের জোগান একটা বড় বিষয়। সেজন্য স্বাস্থ্য খাতে এমন সব ব্যবস্থা নেয়া উচিত যাতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। অসংক্রামক রোগগুলোকে আমরা যত কমিয়ে রাখতে পারব আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ তত কম থাকবে। আমাদের নতুন কারিকুলামে স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটা বিষয় যোগ করতে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন হবে। সচেতন হলে তারা বেশি সুস্থ থাকবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী ঢাকা ঘোষণা পাঠ করেন। আগামী বছরের ১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করা হয়। সম্মেলনে বায়ুদূষণসহ অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির কারণগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সম্মেলনের শেষ দিনের বৈজ্ঞানিক সেশনে অসংক্রামক রোগ স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। স্ট্রোক বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মৃত্যুর প্রধান একটি কারণ হলেও স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অপ্রতুল। ঢাকায় মাত্র ২টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। স্ট্রোকে মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে সারাদেশে এই সুবিধা চালু করার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্রতার কারণে চিকিৎসা শেষ করতে পারে না সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীরা। সারাদেশে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮৫ ভাগ নারী স্ক্রিনিংয়ের বাইরে থাকেন। এ ক্যান্সারে আক্রান্ত মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ নারী রেডিয়েশন সেবা পায়। এত অপ্রতুলতা সত্ত্বেও ২০৩০ সালের মধ্যে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার নির্মূলের টার্গেট রয়েছে সরকারের।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সেবা রোগীরা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। এই সেবায় অনেক বেশি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। প্রয়োজনীয় এই সেবাকে ত্বরান্বিত ও প্রসার ঘটাতে আরো বেশি লিঙ্গভিত্তিক সেবা দিতে হবে এবং জনবল ও উপকরণ বাড়াতে হবে। সচেতনতাও বাড়াতে হবে এবং সেবাদানকারীদের মনো-সামাজিক ও আত্মীক সেবাদানের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগের ওপর উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশের জন্য টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের ব্যবস্থাপনা একটি বড় বাধা। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অল্প কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন যারা ডায়াবেটিস ও এন্ড্রোক্রাইনোলজি বিষয়ে অভিজ্ঞ। একই সঙ্গে মুখে খাওয়ার ওষুধের স্বল্পতা, ইনসুলিন গ্রহণ, ইনজেকশন ডিভাইসে নিজে নিজে ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণেরও ঘাটতি রয়েছে। রোগীর ইনসুলিন বা ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য না থাকাও একটি বড় বাধা।
১২ চিকিৎসককে সম্মাননা : চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ৬ জন বিশিষ্ট চিকিৎসককে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক এবং অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদানের জন্য ৬ জন চিকিৎসককে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল এন্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম এ মালেক, ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স এন্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক ডা. সাদিকা তাহরিন খানম, কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল এন্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, শমরিতা হাসাপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এন আলমকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয়- বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম, দ্য ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন রিসার্স (আইপিজিএমআর) এবং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম, দেশের প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী, মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. এসজিএম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. নিজামুদৌলা চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মনোয়ারা বিনতে রহমানকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়