চট্টগ্রামে রিকশা-বাসের সংঘর্ষে যাত্রী নিহত

আগের সংবাদ

ইসি গঠন বিল ‘তড়িঘড়ি’ পাস : বিএনপি ও জাপার তীব্র বিরোধিতা > সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী সদস্য

পরের সংবাদ

৮ লবিস্টের পেছনে বিএনপি জামায়াতের খরচ ২০০ কোটি : র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সময় লাগবে > সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : র‌্যাবের ওপর সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র?্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে। আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। সেখানে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে। সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই র?্যাবের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে।
তিনি বলেন, আমরা আমেরিকানদের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারব, আমার বিশ্বাস র?্যাবের মতো একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাঙ্কশন উইথড্র করবে। প্রসেস কালকেই হবে না, সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে গত রবিবার জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক। এর প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
৮ লবিস্টের পেছনে বিএনপি জামায়াতের ২০০ কোটি টাকা খরচ : এ কে আবদুল মোমেন জানান, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এ জন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস এন্ড জাস্টিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করা হয় বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতি বছর খরচ করেছে। প্রতি মাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে (যা বাংলাদেশি টাকায় দেড় থেকে দুইশ কোটি টাকা হবে)। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।
র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আবদুল মোমেন বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের অপপ্রচারের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তারা আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি, সেই সঙ্গে পৃথিবীতে বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে, তাদেরও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করছে যে র?্যাব খুব খারাপ প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, র?্যাব জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দেশে সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে। মানবপাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে। এই বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের মিথ্যা তথ্য দেয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তিনি বলেন, র?্যাব এমন কোনো বাজে কাজ করেনি যে তার জন্য তারা পৃথিবীর টেররিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে বিবেচিত হবে। বরং টেররিস্টের বিরুদ্ধেই তাদের কাজ। র?্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকে স্বয়ং আমেরিকার স্ট্রেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এ রকম দেশ, যেখানে খুব উত্তপ্ত ছিল, সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে।
শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র?্যাবকে বাদ দিয়ে কতিপয় সংস্থার চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। এ বিষয়ে ইউএনের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাতিসংঘ যখনই কাউকে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নেয়, তারা নিজের নিয়মে যাচাই-বাছাই করে কাজটি দেয়।
আবদুল মোমেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এ-ও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী, সেটা হলো মুখ্য।
তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্ট চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছে। তবে সরকার কিন্তু লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। লবিস্টরা সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লবি করে, তদবির করে। সরকার সে ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি। সরকার যেটা করেছে, অপপ্রচার-মিথ্যা তথ্য-যেগুলো ছড়ানো হয়, তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য বিজিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে তারা লিখতে পারে। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য, বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের জন্য, অপপ্রচারের বদলে সত্য কথা বলার জন্য বাংলাদেশ সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেটা নেবে। তার একটি নমুনা হচ্ছে বিজিআর। তারা (বিরোধীরা) যখন অসত্য তথ্য দিচ্ছেন, তখন বিজিআরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
আবদুল মোমেন বলেন, বিএনপির কিছু কিছু লোক জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন, বাংলাদেশের সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য। এ ধরনের কাজ যারা করেন, তাদের প্রতি ধিক্কার। বিএনপি যে এতগুলো ফার্মে, রাষ্ট্রবিরোধী কাজে এত টাকা ব্যয় করল, তারা কি তাদের দলের আয়-ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছে? তারা কি তাদের সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এই কাজগুলো করেছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে কোথায় যান, কী করেন, সে খোঁজ নেয়ার জন্য এফবিআইয়ের প্রতি অ্যাপ্রোচ করেন বিএনপি নেতার ছেলে সিজার। তারা জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজার ও তার সহযোগীদের সাজা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়