চট্টগ্রামে রিকশা-বাসের সংঘর্ষে যাত্রী নিহত

আগের সংবাদ

ইসি গঠন বিল ‘তড়িঘড়ি’ পাস : বিএনপি ও জাপার তীব্র বিরোধিতা > সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী সদস্য

পরের সংবাদ

শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা-জেল-জরিমানা : ৫ লাখ দ্বৈত ভোটার নিয়ে বিপাকে ইসি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : দেশে প্রায় পাঁচ লাখ দ্বৈত ভোটার রয়েছেন। এ বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি জেনে না জেনে বা অসৎ কোনো উদ্দেশ্যে নাম বদলে বা মা-বাবার নাম বদলে দুই-দুইবার ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। যদিও দ্বৈত ভোটার হওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দ্বৈত ভোটার নিয়ে বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) অনুবিভাগ। এসব ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হলেও কী শাস্তি দেয়া হবে বা একটি রেখে অপর এনআইডি বাতিল করা হবে কিনা তা নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছে ইসি।
এ বিষয়ে কথা হয় ইসির আইডিয়া প্রকল্পের ফেজ-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দ্বৈত ভোটারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এটা সত্যি একটা জটিল সমস্যা। কেন একটি এনআইডি থাকতে তারা আবার আরেকটি করার চেষ্টা করেছেন। অনেকে না জেনে বা না বুঝে- আবার অনেকে বুঝে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন। আমরা দেখছি যারা না বুঝে এ কাজটা করেছেন তাদের একটা রেখে অন্যটা বাদ দেয়া হবে। আর যারা অসৎ উদ্দেশ্যে হয়েছেন তাদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে দ্বৈত ভোটার হওয়া পাবনার সেলিনা খাতুনের কথা উল্লেখ করেন। সেলিনার এনআইডি কোনোভাবে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে তিনি (সেলিনা) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আবেদন করে ডকুমেন্টের অভাবে ব্যর্থ হওয়ায় অন্যের পরামর্শে ঠিকানা ও বাবার নাম বদলে আবারো ভোটার হন ঢাকায়। যদিও ইসির এনআইডি অনুবিভাগে তা ধরা পড়ে যায় আঙুলের ছাপে। এ কারণে দুটো কার্ডই ব্লক করে দেয় ইসি। সে

অবস্থায় সেলিনা খাতুন ভুল করে দুই বার ভোটার হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি একটি রেখে অপরটি ব্লক করার জন্য ইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন জানান। এর প্রায় ১ বছর পরে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন সেলিনা। পরে তার আবেদন ও স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে তার প্রথম এনআইডি বহাল রেখে দ্বিতীয়টি ব্লক করে দেয় ইসি।
আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের বলেন, ডা. সাবরিনা চৌধুরী নামে একজন তথ্য জালিয়াতি করে দুই এলাকায় ভোটার এবং দুটি এনআইডি তৈরি করেন। এ বিষয়ে সাবরিনার দ্বিতীয় এনআইডিটি ব্লক করে দেয়া হয়। তিনি ভুয়া তথ্য দিয়ে বয়স, নাম, স্বামীর নাম পরিবর্তন ইত্যাদি অপরাধে দোষী। সে কারণে ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয় ইসি। তিনি বর্তমানে জেলে আছেন।
খতিয়ে দেখা গেছে, ডা. সাবরিনার জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিতে ভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এর একটিতে জন্ম তারিখ ২ ডিসেম্বর ১৯৭৮, অপরটিতে ২ ডিসেম্বর ১৯৮৩ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পাঁচ বছর কমানো হয়েছে বয়স। দুটি এনআইডিতে স্বামীর নামও ভিন্ন। একাধিক স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার হন সাবরিনা।
এনআইডি-২ এর পিডি বলেন, আমরা প্রতিটি উপজেলা, জেলা অফিসকে এ ধরনের দ্বৈত ভোটারদের এনআইডি ব্লক করে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। ফলে দ্বৈত ভোটাররা সমস্যায় পড়েছেন, কোনো কাজ হচ্ছে না। তারা অনেকেই এনআইডি খুলে দেয়ার আবেদন করেছেন। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। কেন, কোন উদ্দেশ্যে তারা দুই বার ভোটার হলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি দেখা যায় ভুলক্রমে না বুঝে তারা করে ফেলেছেন, তারা এটা স্বীকার করে আবেদন করলে তাদের একটি বন্ধ করে অন্যটি বহাল রাখা হবে। আর তদন্তে যদি দেখা যায় তারা অসৎ উদ্দেশ্যে (বয়স কমাতে, মামলা এড়াতে, দুই-দুই বার দুই নামে ঋণ নিতে, দুটো পাসপোর্ট করা, অবৈধভাবে জমি বিক্রয় ইত্যাদি) দুই বার এনআইডি করেছেন বা দ্বৈত ভোটার হয়েছেন তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলাও করেছে ইসি। এটা নিয়ে প্রতিদিন শত শত ভোটার এনআইডি পেতে দেশের জেলা-উপজেলা অফিসগুলোতে ভিড় করছে। আবার এ বিষয়টি জটিল বিধায় এগুলো আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে বলেছি। অধিকাংশ আবেদনই প্রধান কার্যালয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের বলেন, কখনোবা অনেক গ্রাহকের ডাটার ভেরিয়েশন বা দুই রকম তথ্য আসছে। কিছু ঠিকানা বা বাবা-মায়ের নামে, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি ভুল আসছে- এসব ত্রæটির কারণে বিশেষ কিছু গ্রাহকের এনআইডি বা স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হতে সমস্যা হচ্ছে। এসব দেখে তাদের কার্ড স্থগিত করা হচ্ছে। তবে দ্বৈত ভোটারদের সাবধান করে তিনি বলেন, তথ্য পরিবর্তনের জন্য ফর্ম পূরণ করে বা পদ্ধতি অনুযায়ী ডকুমেন্টসহ আবেদন করতে হবে। তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দ্বৈত ভোটার হবেন না, এটি একটি বড় ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য জেল জরিমানাও হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়