ঢামেকে আগুন আতঙ্ক, রোগীর স্বজনদের ছুটাছুটি

আগের সংবাদ

কড়া নির্দেশনা কার্যকরে ঢিলেমি

পরের সংবাদ

হ্রাস পাচ্ছে খাদ্যশস্য উৎপাদন : সিংগাইরের ৬০ ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) থেকে : সিংগাইরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৬০ ইটভাটায় জ্বলছে আগুন। এতে পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ। প্রতি বছরই কমছে ফসলি জমির মাটি। ২১৭.৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে এ বছর ৬০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। ভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রভাবশালীরা আবাসিক এলাকায় ৩ ফসলি জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলেছে এ ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে ওইসব ভাটায়। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে। জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকিতে।
স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে ২৯টি, চান্দহরে ১০টি, বায়রাতে ৭টি, জামির্ত্তায় ৬টি, চারিগ্রামে ৩টি, সিংগাইর সদরে ৩টি ও ধল্লাতে ২টি ইটভাটা চালু রয়েছে। যার ফলে দূষণের কবলে পড়েছে পুরো এলাকা। আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল, বসতবাড়ির ফলদ-বনজ গাছপালা। এছাড়া সরকার হারাচ্ছে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ এবং বৈধগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এ মৌসুমে।
এদিকে ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমাণ মাটির জোগান দিতে প্রতি বছরই ৪-৫শ বিঘা ৩ ফসলি জমি জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। বলধারা ইউনিয়নের উত্তর পারিল গ্রামের মো. আসলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টে আমার দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে বলধারা জলিল কোম্পানির মালিকানাধীন সফর ব্রিকস নামের ইটভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দিলেও মালিকপক্ষ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাটাটি চালু রেখেছে। তিনি আরো বলেন, এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে চালাচ্ছেন ইটভাটা। চান্দহর ইউনিয়নের ওয়াইজনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের রিফায়েতপুর-মাধবপুর চকটি ইটভাটার নগরীতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ম্যানেজ করে শুরু করে ইট পোড়ানোর কর্মযজ্ঞ। এ ইটভাটা বন্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে জামির্ত্তা ইউনিয়নবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ২-৩ ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তারপরও থেমে নেই মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ। ১৮ জানুয়ারি সরেজমিন বলধারা ইউনিয়নের হোনাখালী চকে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ট্রলি যোগে নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মহর ও কুদ্দুছ কোম্পানির ইটভাটায়। স্থানীয়রা জানান, দিনের পাশাপাশি রাতেও চলে মাটি কাটা। এ প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুছ কোম্পানি বলেন, এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. টিপু সুলতান স্বপন বলেন, ইটভাটাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর ০.৭০ শতাংশ হারে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ এলাকায় ব্যাপকহারে ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।
সিংগাইর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক কোনো ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে দেয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড ও ইউএনওকে গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য বলব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়