সেশনজট নিরসনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমাল ঢাবি

আগের সংবাদ

কী নির্দেশনা পেলেন ডিসিরা : জনগণের সেবক হতে হবে > খাদ্য নিরাপত্তা-বাজার স্থিতিশীল রাখা > সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ

পরের সংবাদ

চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত দাউদকান্দিবাসী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : দাউদকান্দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর অবস্থা বেহাল। চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হলেও সেখানে থাকতে চান না অনেকেই। ইউনিয়ন স্বাস্থ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের দেখাই মেলে না। ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন থাকলেও চিকিৎসক নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বহির্বিভাগে নেই কোনো চিকিৎসক। সব মিলিয়ে চিকিৎসাসেবার চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। উপস্বাস্থ কেন্দ্রগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে তদারকি করা হয়। মূলত, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
প্রতিটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার থাকলেও এক বছর ধরে তাদের কাউকে কর্মস্থলে দেখা যায়নি বলে এলাকাবাসী জানান। পদায়ন দাউদকান্দি হলেও প্রেষণে ঢাকা এবং কুমিল্লায় চলে গেছেন মেডিকেল অফিসাররা। এর মধ্যে স্বপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. বীথি আজিজ ও ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. ফাহমিদা ইস্কান্দার তুরিন এক বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), দোনারচর ২০ বেড হাসপাতলের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) পদ শূন্য থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। এছাড়া রয়েছে ওষুধ সংকট।
সরজমিন গেলে উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বেশির ভাগ সময়ই চিকিৎসক থাকেন না। আর প্রায় সময়ই বন্ধ থাকে, তাই বাধ্য হয়েই গ্রাম্য চিকিৎসকদের কাছে যেতে হয়। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে পদায়নকৃত মেডিকেল অফিসার ডা. ইমাম মেহেদি হাসান খান এক বছর ধরে প্রেষণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে সংযুক্ত আছেন। তিনি বলেন, সরকার যখন যেখানে পাঠাবে সেখানেই যেতে হবে।
সুন্দলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সহকারী সার্জন কুমিল্লা সদর উপজেলার বাসিন্দা ডা. অভিষেক দেবনাথ তিন মাস আগে এখানে যোগ দেয়ার পরই প্রেষণে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চলে যান।
দোনারচর ২০ বেড হাসপাতালে এক বছর আগে ডা. ফাবলিনা নওশিন নামে একজন মেডিকেল অফিসার পদায়ন হলেও কেউ তাকে এ কর্মক্ষেত্রে দেখেননি বলে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিনথিয়া তাসনিম বলেন, অল্প কয়েক দিন হলো আমি এখানে যোগ দিয়েছি। এখানে সমস্যার শেষ নেই। মানুষের অতি প্রয়োজনীয় পানি, বিদ্যুৎ না থাকায় এখানে কেউ থাকতে চান না। আমি প্রতিদিন বাসা থেকে চার্জার ফ্যান নিয়ে আসি। শুনেছি মেডিকেল অফিসার ফাবলীনা নওশীন গৌরীপুরে ডিউটি করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি ওএসডি হওয়া দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহীনুর আলম সুমন থাকাকালে ১৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জনরা প্রেষণে জেলা সদর ও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চলে যান। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে গ্রাম চিকিৎসকদের সঙ্গে শাহীনুর আলম সুমন মাসোহারা চুক্তি করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। দাউদকান্দি সদর, গৌরীপুর বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, শহীদনগর, সুন্দুলপুর এলাকার গ্রাম চিকিৎসকদের সংগঠন তৈরি করেন তিনি। সংগঠনের সভাপতি গৌরীপুরের মহসিন এবং সাধারণ সম্পাদক দাউদকান্দি সদরের সুমন সাহার মাধ্যমে মাসোহারা তোলা হতো। গ্রাম চিকিৎসকদের কাছ থেকে শাহীনুর আলম সুমনের মাসোহারা গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে ওএসডি করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম চিকিৎসক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এড়িয়ে যান।
ওএসডি হওয়া শাহীনুর আলমের জায়গায় নতুন দায়িত্ব নেন ২৫তম বিসিএসের (স্বাস্থ্য) কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অফিসার না থাকার বিষয়টি নজরে এসেছে। এ বিষয়ে শিগগিরই ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। আর গ্রাম চিকিৎসকদের সঙ্গে পূর্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি শুনেছি, এটি মোটেই কাম্য নয়। গ্রাম চিকিৎসকরা কোনোভাবেই গ্র্যাজুয়েট চিকিৎকদের সমতুল্য বা প্রতিযোগী হতে পারে না। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতাও প্রয়োজন হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, আগে কী হয়েছে সেটা ডিপার্টমেন্ট দেখবে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সদ্য যোগ দেয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
জেলা সিভিল সার্জন মো. মোবারক হোসেন বলেন, গত বছর করোনাকালীন চিকিৎসকদের শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া কিছু লোকবল সংকটও রয়েছে, যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়