অধ্যাপক সাইদা হত্যা : গ্রেপ্তার আনারুলের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

আগের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ : নির্বাচন কমিশন গঠনে ৪ প্রস্তাব

পরের সংবাদ

শিল্পকলার ডিজিকে জিজ্ঞাসাবাদ > অপপ্রচার চালানো হচ্ছে : লাকী > বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা : দুদক সচিব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালককে আমাদের অনুসন্ধানকারী দল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার বক্তব্য ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করা হবে। বিশ্লেষণ শেষে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুদক সচিব বলেন, অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার পর আমাদের মনে হয়েছে আরো অনুসন্ধান দরকার। তাকে (লিয়াকত আলী লাকী) প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছিল। তিনি তা করেছেন। এখন অনুসন্ধানকারী দল এসব বিশ্লেষণ করবেন। যদি আরো নথির প্রয়োজন হয়, সেটাও দাখিল করতে বলা হবে।
এদিকে দুদক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত আলী লাকী দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যে ২৬ কোটি টাকা লোপাটের কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমি বিল পরিশোধ করিনি। কিন্তু বলা হচ্ছে বিল পরিশোধ করেছি। তাহলে তো বস্তুনিষ্ঠতা থাকল না। আপনারা যে ২৬ কোটি টাকা বলছেন, তা ২১ কোটি হবে। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। দেড় কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েছি। বাকি ১২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যয় হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানে প্রায় এক দেড় কোটি টাকায় মন্ত্রণালয়ের বিল পরিশোধ করেছি। আন্তর্জাতিক অনেক প্রোগ্রাম হয়েছে। মন্ত্রণালয় যে অর্থ দিয়েছিল সেটার বিপরীতে বিলগুলো পরিশোধ করতে হয়েছে। ভুয়া বিল-ভাউচার প্রসঙ্গে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের আপ্যায়ন উপকমিটির কনভেনর ছিলেন নওশাদ সাহেব। সেই কমিটি এটি উপস্থাপন করেছে। আমি সেই অনুষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। দেখলাম যে, দুটি বিল নিয়ে আমার কাছে প্রশ্ন এসেছে। আমি বিলে কোনো স্বাক্ষর করিনি।
পরিচালককে সচিব বানানো ও ৩০ জুনের মধ্যে টাকা তুলে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিল্পকলায় গত ৪৭ বছরে এমন ১৫ জনকে সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দেশের অনেক সংস্থাতেই ৩০ জুনের মধ্যে অনেক কিছু সমাপ্ত করা হয়। আগে যে সচিব ছিলেন, তিনি ২০০ নথি পেন্ডিং রেখে গিয়েছিলেন। আমার

যে গরিব কর্মী তাদের যদি বেতন না দেই, তারা তো মারা যাবে। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ইস্যু করা চেক সম্পর্কে বলেন, এটা ছিল নৃত্য ও সংগীত নির্মাণের বিষয়। এসব নৃত্য ও সংগীত নিয়ে আগামী ২০, ২১, ২২ তারিখে প্রোগ্রাম হতে যাচ্ছে। সেখানে উত্তর পেয়ে যাবেন।
সকাল ৯টা ৫২ মিনিটের দিকে লিয়াকত আলী লাকী দুদক কার্যালয়ে হাজির হন। এর কিছু সময় পরেই দুদক উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে গঠিত টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, যা শেষ হয় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে। লাকীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি তাকে তলবি নোটিস দেয় দুদক। এর আগে ৫ জানুয়ারি অভিযোগ অনুসন্ধানে শিল্পকলা একাডেমির দুই অর্থবছরের বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তলব করে চিঠি দেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সেসব নথিপত্র ইতোমধ্যে দুদকে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
প্রায় এক যুগ ধরে মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা তুলে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চুক্তিভিত্তিক এক কর্মকর্তাকে সচিবের দায়িত্ব দিয়ে এ অর্থ উত্তোলন করে নেন লিয়াকত আলী লাকীসহ একটি সিন্ডিকেট। দুদকে দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন শিল্পকলা একাডেমির আগের সচিব নওশাদ হোসেন বদলি হলে সেদিনই নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমকে সচিবের দায়িত্ব দেন লাকী। ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বিভিন্ন কৌশলে উত্তোলন করা হয়। সরকারি বরাদ্দের অর্থ খরচ দেখাতেই এমন অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয় বলে দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এর বাইরেও লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সংগীত বিভাগের কক্ষে ব্যবহারের জন্য পর্দা, ক্রোকারিজ ও ফার্নিচার না কিনে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ, ‘ডান্স অ্যাগেইনস্ট করোনা’ কর্মসূচির আওতায় নৃত্যদলের সম্মানী, হার্ডডিস্ক কেনা, ডকুমেন্টেশন, প্রপস-কস্টিউম, প্রচার ও বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা তোলার অভিযোগ।
যেসব রেকর্ডপত্র তলব করা হয় : দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্পকলা একাডেমির ঢাকা কার্যালয়ে বরাদ্দ করা বাজেট ও ব্যয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে অব্যয়িত ৩৫ কোটি টাকা ২০২১ সালের ৩০ জুনে ব্যয়করণ-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তলব করা হয়। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আয়োজন-সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংবলিত নথির ফটোকপি, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ব্যয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাউচার-ক্যাশ বই এবং শিল্পকলা একাডেমি নামীয় সোনালী ব্যাংক (সেগুনবাগিচা শাখা) অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের কপি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়