আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার : আরসাপ্রধানের ভাই শাহ আলী আটক

আগের সংবাদ

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ ড্রেজার : নদী পুনরুদ্ধার কাজে বাধা

পরের সংবাদ

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ : নির্বাচন কমিশন গঠনে ৪ প্রস্তাব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ রাষ্ট্রপতির কাছে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিয়েছে দলটি।
গতকাল সোমবার বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে এমনই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের বিষয় নিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
এর আগে বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষে সংলাপে নেতৃত্ব দেন। বিকেল ৪টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান। ১০ সদস্যের এ প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

সংলাপের বিষয়ে দলীয় কার্যালয়ে ব্রিফিং করেন কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ মেনে ইসি গঠনে একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে সরকার এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া উত্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনে যে ব্যবস্থা নেবেন, তাতে আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে। এর আগেও দুবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ছিল। সেই বিষয়টিও আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যেভাবে আইন পাস হয়, সেভাবেই আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের হাতে ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়া নেই অথবা আইন পাস করার কোনো ম্যাজিকও আমাদের হাতে নেই। যে প্রক্রিয়ায় আইন প্রণয়ন হয়, সেভাবেই হবে।
অল্প সময়ে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব কিনা এর জবাবে তিনি বলেন, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, অপেক্ষা করুন।
সার্চ কমিটিতে কোনো নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রক্রিয়াটা মাত্র শুরু হয়েছে। আইন প্রণয়নের প্রস্তাব হয়েছে। এরপর এটি নিয়ে আলোচনা হবে। নতুন ইসি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইন, আইন, আইন। আইনের বিকল্প কোনো কিছু নেই। এ প্রক্রিয়ায় বিন্দুমাত্র কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। যদি আইন চূড়ান্ত হয়ে যায়, তাহলে আইন অনুযায়ীই ইসি গঠন হবে।
সংলাপের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব নির্বাচনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করে। তারা একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা, ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা, ভোটকেন্দ্রে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করার কথাও বলেছে দলটি। নির্বাচনের আগে ও পরে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম রুটিন দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়টি প্রতিনিধিদল তুলে ধরে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে সুচিন্তিত মতামত দেয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন গঠনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে পাস হবে এবং এ আইনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে চারটি প্রস্তাব লিখিত আকারে তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেছি। প্রথমত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি উপযুক্ত বিবেচনা করেই ইসি সদস্যদের নিয়োগ দেবেন। তৃতীয়ত, ইসি গঠনের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণেই মূলত আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যে কোনো আইন হবে সাংবিধানিক বিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন। এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সবার মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এই ব্যবস্থাটি এখন পর্যন্ত দুবার অনুশীলন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুবারই দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ অনুশীলনে অংশ নিয়েছে।
এ অবস্থায় এই রীতির আলোকে এবং এ প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। চতুর্থ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সব নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়