চট্টগ্রামে সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

পরের সংবাদ

উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টদের আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে বরং দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। দুর্ঘটনা একটি দুর্ঘটনাই। এর জন্য কে দায়ী তা পরে খুঁজে বের করা যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করবে ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিবে। গতকাল বুধবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এ সময় গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রমুখ। আর প্রকল্পপ্রান্তে উপস্থিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক দিক তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম। প্রকল্পগুলো হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস; সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক এবং রাঙ্গামাটির নারিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ এবং ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এই নির্মাণের সাবিক তত্ত্বাবধানে ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই আগে ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যাই করা হয়। সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনাটা কেন, কীভাবে, কার কারণে ঘটল সেটা যেন বিবেচনা করেন। সেখানে আমি পথচারীদের বলব ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন সবাই মেনে চলবেন এবং মোবাইল ফোন কানে নিয়ে সড়ক বা রেললাইনের পাশ দিয়ে চলা বা পার হতে যাবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় কথা হলো যেখানে সেখানে দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। এভাবে রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আর ছাত্রছাত্রীদের আমি বলব রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মানতে হবে। আর শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমি বলব আমাদের তরফ থেকে প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া উচিত। প্রত্যেকটি স্কুল,

কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুল ছুটি এবং শুরুর সময় প্রত্যেকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে সহযোগিতার জন্য কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদেরও লোক রাখতে হবে। যাতে ছেলেমেয়েরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে। এ ছাড়া ভারি যানবাহনগুলো বিশেষ করে বাস, ট্রাক, লরি সেগুলোরও যান্ত্রিক কোনো ত্রæটি আছে কিনা সেটাও পরীক্ষা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সারাদেশে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে জাতীয় মহাসড়কে ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট বা দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করে ব্ল্যাকস্পটগুলোতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আরো ২৫২টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১৭২টি ব্ল্যাকস্পটের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৮০টি ব্ল্যাকস্পট উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে ঐ সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। মহাসড়কে গাড়ি চালাতে গেলে চালকদের যেন ঝিমুনি না আসে সে জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশ্রামাগার তৈরির পাশাপাশি তার সরকার চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রয়োজনে চালক পথক্লান্তিতে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু তাই বলে অদক্ষ হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো ঠিক নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একটানা গাড়ি চালনা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে দুর্ঘটনা রোধে টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং মাগুরায় পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য ৪টি আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
ঢাকাসহ সারাদেশের মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ‘রিভাইসড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান’ এর আওতায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কম্যুটার রেলওয়ে, ভূগর্ভস্থ টানেল, ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড, সার্কুলার রেললাইন এবং ওয়াটারওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানীবাসী নিরাপদ ও দ্রুততম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। মহাসড়কে পারাপার নিরাপদ করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার সেনানিবাস শুটিং ক্লাব পয়েন্টে আন্ডারপাস নির্মাণ ও জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে ১৩টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। আন্ডারপাসের স্থানীয় সুবিধা বিবেচনা করে ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২’ এর আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে ৩৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে ২০০৯ থেকে বর্তমান মেয়াদে ১ হাজার ৪০১টি সেতু ও ৬ হাজার ৩৬০টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪ হাজার ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ১৫ হাজার ১৪২ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস এবং ৭ হাজার ৩১২ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান এবং পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়