নির্বাচনী আইন প্রণয়নসহ ৫ দফা প্রস্তাব এনপিপির

আগের সংবাদ

বদলে গেছে ‘প্রাচ্যের ড্যান্ডি’

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও : বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন > ঢিলেঢালা অভিযানে ১১ জনকে জরিমানা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ওমিক্রনের সংক্রমণ প্রতিরোধে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সরকারের ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। মাস্ক না পরায় শাহবাগ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে গণপরিবহন ও যাত্রীদের জরিমানা করা হয়। এছাড়া অনেক যাত্রীকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু প্রথম দিনে রাজধানীর কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই লোকজন বাসে, গাড়িতে এবং পায়ে হেঁটে অবাধে চলাচল করেছেন। বড় বড় কাঁচাবাজারেও লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
তবে ব্যতিক্রম ছিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে মাস্ক ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে বা অবস্থান করতে দেয়নি রেলওয়ে কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাই গতকাল সকাল থেকেই সরকারের বিধিনিষেধ কার্যকরে মাঠে নামে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকেই রাস্তায় অবস্থান নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শাহবাগ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দুপুর ১২টার দিকে অভিযান শুরু করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন গণপরিবহন থামিয়ে মাস্কবিহীন যাত্রীদের জরিমানা করতে শুরু করে। একই সঙ্গে মাস্ক ছাড়া যাত্রী বহন করায় পরিবহনের কয়েকজন চালকদেরও সতর্ক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত থুতনিতে ও পকেটে মাস্ক রাখায় ১১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস পৌনে ২ ঘণ্টার অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা অনেক কম। বিভিন্ন পরিবহনের বাস থামিয়ে ৫০-৬০ জনকে নিজের টেবিলে ডেকেছি। তারা কেউ থুতনিতে আবার কেউ মুখে মাস্ক পরেন। নিয়ম অনুযায়ী, লোকজন মাস্ক পরেননি। আবার অনেকেই মাস্ক পকেটে রেখেছেন। আবার অনেকেই ম্যাজিস্ট্রেট দেখে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরেছেন। এছাড়া অধিকাংশ যাত্রীর কাছেই কোনো মাস্ক ছিল না। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে নানা ধরনের অজুহাত দিয়েছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিধিনিষেধের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করা। সতর্ক করার পাশাপাশি অভিযানকালে ১১ জনের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। তাদের ১০০-২০০ টাকা করে মোট ২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে মাস্ক ব্যবহার করবেন বলে মুচলেকাও দিয়েছেন। অভিযানের খবর অন্যরা যখন জানবেন, তখন তারাও সতর্ক হবেন বলে আমরা আশা করি।
তবে নগরীর অন্য কোথাও কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়নি। এদিকে রাজধানীর অলিগলি, পাড়া-মহল্লা, পাইকারি ও খুচরা কাঁচাবাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি ও কলরবে সব বাজার মুখর ছিল। গুনে গুনে কিছু মানুষের মুখে মাস্ক দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের শুঁটকি-বিক্রেতা আতাউর মাস্ক ছাড়াই কাজ করছিলেন। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে জানতে চাওয়ামাত্রই তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে ব্যবহার শুরু করেন। তিনি বলেন, কাজের ব্যস্ততার কারণে করোনার টিকা নিতে পারিনি। এখন নিবন্ধন হয়েছে। এখন থেকে মাস্ক পরবেন বলেও জানান। আবার বাজারে আসা অনেকেই জানান, তারা মাস্ক ব্যবহারের সরকারি প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাদেক খান কৃষি মার্কেট, টাউনহল বাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
তবে ব্যতিক্রম ছিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এখানে মাস্ক ছাড়া কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেয়নি রেলওয়ে কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা। ভেতরে কেউ মাস্কবিহীন অবস্থায় ঘোরাফেরা করছে কিনা সেদিকেও এর কর্মীরা তদারকি করছেন। লকডাউন হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণে কমলাপুর রেলস্টেশনে আজ সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য আন্তঃনগর ট্রেনে সিট ছাড়া টিকেট বিক্রি হয়নি। ট্রেনের টিকেট ছাড়া কাউকেই স্টেশনের ভেতরে ঢুকতেও দেয়া হয়নি।
তবে রাজধানীর দূরপাল্লার বাস-কাউন্টার ও বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। পরিবহনের নেতারা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা তারা ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করবে।
অপরদিকে গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ এলাকাতেও গণপরিবহনে এবং রাস্তায় মাস্কবিহীন পথচারী এবং যাত্রীদের চলাচল করতে দেখা গেছে। রামপুরা, মগবাজার, ফার্মগেটসহ অন্যান্য এলাকাতেও স্বাস্থ্যবিধি দেখা যায়নি। সব গণপরিবহনের বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা ছিল। সায়েদাবাদ-আব্দুল্লাহপুরগামী অনাবিল পরিবহনের কন্ট্রাকটর আব্দুল গনি জানান, এত যাত্রীর চাপে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের ব্যাপারে মালিক এখনো কিছুই জানায়নি। ভিক্টর পরিবহনের চালক মোসলেম বলেন, ‘এখন তো আর গেটলক সার্ভিস নেই। তাই আমরা যাত্রী উঠতে না করি না। উঠতে চাইলে কাউকে আটকানো যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মানা যার যার নিজের ব্যাপার। বাস চালামু নাকি কে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না তা দেখব। আমাদের কিছুই করার নেই।’
স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরের প্রথম দিনে রামপুরা, সেগুনবাগিচা, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির পণ্য কেনার জন্য অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা গেছে। রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনের রাস্তায় টিসিবির পণ্য কেনার জন্য শত শত বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেগুনবাগিচা এলাকায় ২টি টিসিবির ট্রাকের পেছনেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সব জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ছিল। অধিকাংশ মানুষের মুখে মুখে মাস্ক ছিল না।
বিধিনিষেধের প্রথম দিনে রাজধানীর সব শ্রেণির দোকান, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাস্ক পরার নির্দেশনা একেবারেই উপেক্ষিত দেখা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়