জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস আজ

আগের সংবাদ

উৎসবমুখর নারায়ণগঞ্জ : প্রচারণায় এগিয়ে আইভী

পরের সংবাদ

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ! জিনোম সিকুয়েন্সিং বাড়ানোর তাগিদ > সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে : বিশেষজ্ঞদের মত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণের (ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন) বিষয়টি ডিসেম্বরের শেষেই স্বীকার করেছিল রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিশেষজ্ঞরাও। দেশে এখন পর্যন্ত (গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা) ২১ জন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিআইএসএআইডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সংক্রমিত ২১ জনের মধ্যে গত ৪ সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে ১৮ জন। শতকরা হিসাবে গত ৪ সপ্তাহে ওমিক্রন শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশে করোনার শুরুর পর রোগতত্ত্ববিদরা বলেছিলেন, যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে, তখন ওই জায়গাকে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করে অনুসন্ধান করা হয়।
ওমিক্রন পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আরো কয়েক সপ্তাহ (কমপক্ষে দুই সপ্তাহ) সময় লাগবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গত দুবছর ধরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়ানোর ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়তে থাকে। সে হিসাবে দেশে ৩ সপ্তাহ পর সংক্রমণ বাড়বে ও ৬ সপ্তাহের মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তারা বলছেন, তবে দেশে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকাতে। সামাজিক সংক্রমণের (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) লক্ষণ স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, করোনার দৈনিক শনাক্ত যে হারে বাড়ছে তাতে কোথাও কোথাও সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে সারাদেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। এদিকে সম্প্রতি সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইইডিসিআর বলেছে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ বাড়ার জন্য ডেল্টা ধরনই দায়ী। এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রবিবার কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয়

কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, পরিস্থিতি বোঝার জন্য আমাদের হাতে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই। দেশে করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে- তাতে এটা বলতেই হবে, ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। আইইডিসিআর বলছে, এখনো ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্লাস্টারভিত্তিকই রয়েছে। এর বিস্তৃতি বাড়লে তখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যাবে। আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পথে আছি।
প্রখ্যাত এই রোগতত্ত্ববিদ আরো বলেন, আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণের সার্বিক চিত্রটি বোঝা যাবে। ঢাকাতে ক্লাস্টারভিত্তিক সংক্রমণ হলেও আমাদের আচরণের কারণে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। হুকুমনামা ও প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে তা মানাতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে। সরকারকে কঠোর হতে হবে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমাদের নেই। অনান্য দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়। কতজন উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত এরও সঠিক তথ্য নেই। সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি। এখনো পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণ ব্যাপক না হলেও কোনো কোনো ক্লাস্টারে হয়ত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, ওমিক্রণের প্রভাবেই শনাক্ত রোগী ও সংক্রমণের হার বাড়ছে। এত কোনো সন্দেহ নেই। গত কয়েক দিনে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে অনেকেই এসেছেন। সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছেই। এতে ওমিক্রণ এসেছে এবং ঢাকাতেই ঢাকায় ওমিক্রণের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন হয়েছে এবং ঢাকা শহরে ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন বাড়ছে। ঢাকা থেকেই এটি ছড়িয়ে পড়বে। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে এক সময় ডেল্টাসহ অনান্য যে ধরনগুলো আছে সেই ধরনগুলোকে পেছনে ফেলবে ওমিক্রন।
ডা. মুশতাক হোসেন আরো বলেন, ২০ জনের ম্যাপিং দিয়ে দেশের সার্বিক চিত্রটা বোঝা যাবে না। এটি বুঝতে আমাদের আরো দুই সপ্তাহ- কমপক্ষে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে এ কথা ঠিক, ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে নমুনার জিন রহস্য উন্মোচনে দুর্বলতা রয়েছে। যদি পর্যাপ্ত জিন রহস্য উন্মোচন করা হতো তা হলে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট হওয়া যেত। তবে দেশে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণের লক্ষণ যে শুরু হয়েছে তা স্পষ্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়