গয়েশ্বর চন্দ্র রায় : নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ সরকার

আগের সংবাদ

ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ! জিনোম সিকুয়েন্সিং বাড়ানোর তাগিদ > সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে : বিশেষজ্ঞদের মত

পরের সংবাদ

দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি আবাহনীর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও জায়ান্ট ক্লাব ঢাকা আবাহনী আবার ফিরেছে তাদের পুরনো রূপে। মাঝের কয়েক বছর বসুন্ধরা কিংসের আধিপত্য ছিল দেশের ঘরোয়া ফুটবলে। এবার লড়াইয়ে ফিরেছে আকাশি-নীলরা। চলতি মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনালে কিংসদের ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এবার ফেডারেশন কাপে শিরোপার লড়াইয়ে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটি।
সদ্য সমাপ্ত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেস, রাফায়েল আগস্তু, ডরিএলটনের মতো তারকা বিদেশি ফুটবলারদের বিপক্ষে রহমতগঞ্জের জয় বের করে আনা বেশ কঠিন। তারওপর কোয়ার্টার ফাইনালে আকাশি-নীলরা শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। এরপর আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে সাইফকে হারানোর ম্যাচে তাদের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল । সাইফের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার শট বা দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন সোহেল। শুধু জামালের নয়, রুয়ান্ডার ডিফেন্ডার এমেরি বেইসেঙ্গের শটও রুখে দেন এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। যার প্রতিদান ম্যাচ শেষে হাতেই পান সোহেল। সেমিফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিনন্দ্রেস। তবে পুরস্কার হাতে নিয়ে মঞ্চেই সোহেলকে ডেকে নিয়ে নিজের পুরস্কার তুলে দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন কলিনদ্রেস। সুতরাং আবাহনীর বিদেশি ফরোয়ার্ডদের বাইরে রহমহগঞ্জের অন্যতম চিন্তার কারণ গোলরক্ষক সোহেল। ম্যাচে শেষে তাই সোহলের প্রসংশা করতে ভুলেননি আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। তিনি বলেন, ‘গোলরক্ষক শহিদুল দারুণ খেলেছে। কলিনদ্রেসসহ অন্যরাও ভালো খেলেছে।’ রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়েও লেমস আশাবাদী, ‘ট্রফির জন্য আমরা খেলব। আমি আত্মবিশ্বাসী। জিততে পারব।’ তবে শক্তিমত্তায় কে এগিয়ে আর কার ঘরে যাচ্ছে ফেডারেশন কাপের শিরোপা তা জানা যাবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনাল ম্যাচে।
এর আগে আসরে দশবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে রহমতগঞ্জ। ফেডারেশন কাপের প্রথম সেমিফাইনালে তারা গত বৃহস্পতিবার সাদা-কালোদের বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। দলের জয়ে অবদান রেখে গোল দুটি করেন ফিলিপ আজাহ ও সানডে চিজোবা। এর আগে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষেও এই দুই ফুটবলার গোল করেন। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৩ গোলে জেতা ম্যাচটিতে দুটি গোল করেন ফিলিপ আজাহ, একটি গোল করেন সানডে। সুতরাং ঢাকা মোহামেডান যে খুব সহজে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেবেন এমন ভাবাটা বোকামি। সানডে চিজোবা আবার আবাহনীর সাবেক ফুটবলার। এই মৌসুমে ধারে তিনি রহমতগঞ্জের হয়ে খেলছেন। আকাশি-নীলদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। বলা যায় ফাইনাল ম্যাচের লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলেছিল রহমতগঞ্জ। যদিও সেবার বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে শিরোপা ঘরে তোলা হয়নি তাদের। তবে এবার তাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে প্রথমবারের মতো নিজেদের ঘরের ফেডারেশন কাপের শিরোপা তোলার। এদিকে রহমতগঞ্জ গ্রুপ পর্বের একমাত্র ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ড্র করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র টুর্নামেন্টে অংশ না নেয়ার তারা সহজ সমীকরণে চলতি ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে।
এর আগে ঢাকা আবাহনী গ্রুপ পর্বের একমাত্র ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে। সে ম্যাচে আবাহনীর হয়ে দুটি গোল করেন ডরিএলটন। সুতরাং কলিন্দ্রেস, রাফায়েল আগুস্তোদের ভিড়ে এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে ভুলে গেলেও চলবে না। তাদের গ্রুপের আরেক দল উত্তর বারিধারা ক্লাব টুর্নামেন্টে অংশ না নেয়ার সহজ সমীকরণে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে ঢাকা আবাহনী। ফেডারেশন কাপে সর্বোচ্চ ১১টি শিরোপার জেতার রেকর্ড ঢাকা আবাহনীর। ফেডারেশন কাপে তাদের শিরোপা জয়ের শুরুটা ১৯৮২ সালে। এরপর ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আরো সাতটি শিরোপা জেতে তারা। তবে ২০১৬ থেকে ২০১৮, টানা অপ্রতিরোধ্য ছিল ক্লাবটি। এই তিন বছরে তারা টানা তিনটি ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতে ট্রফি জয়ের সংখ্যাটি ১১ করেন। এবার তাদের সামনে ট্রফির সংখ্যা ডজনে পূর্ণ করার সুবর্ণ সুযোগ।
এদিকে ফেডারেশন কাপ প্রায় শেষ হতে চলেছে। কিন্তু শুরুর দিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) আসরটি চালিয়ে নিতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট চলবে কিনা এমন শঙ্কাও দেখা গিয়েছিল। বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা ফুটবল ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেনি। কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফ খেলার উপযোগী নয় দাবি করে গত ২৫ ডিসেম্বর ফেডারেশন কাপের প্রথম দিনে মাঠে আসেনি বসুন্ধরা কিংস ও উত্তর বারিধারা। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর মাঠে আসেনি আসেনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। সঙ্গে তাদের এও অভিযোগ ছিল যে, কয়েকটি দলকে সুবিধা দিতে আসরের সূচি পরিবর্তন করেছে বাফুফে। এই জন্য অবশ্য শাস্তিও পেতে হয়েছে দলগুলোকে। বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে আগামী ফেডারেশন কাপে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দুই দলকেই ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করে বাফুফে। আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে বাফুফের তহবিলে। একদিন পর শাস্তি পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাকে একদিন বাড়িয়ে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এছাড়া বাফুফে ৩টি দলকেই কারণ দর্শাও নোটিস দিয়েছে। বসুন্ধরা এর কোনো জবাব দেয়নি। বারিধারার পক্ষ থেকে জানানো হয়, চোটের ভয়ে তারা কমলাপুরে খেলছে না। অন্যদিকে সূচিতে অসঙ্গতি ও ঝুঁকিপূর্ণ টার্ফে ফেডারেশন কাপে খেলতে রাজি হয়নি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র।
এই জবাব অবশ্য গ্রহণযোগ্য মনে করেনি ফেডারেশন। ফলে তিন দলকেই বড় শাস্তি দেয়া হয়েছে। বাফুফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কোডের ৩১ নম্বর ধারা এবং এবারের বসুন্ধরা গ্রুপ ফেডারেশন কাপের ১৯.৩ ধারা অনুযায়ী সর্বসম্মতভাবে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির সভাপতি সালাম মুর্শেদী সে সময় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘শৃঙ্খলা কমিটি বাইলজ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাইলজে আছে, কেউ না খেললে বড় শাস্তি। তা ছাড়া দর্শক মাঠে এসে ফিরে গেলে এবং টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আর্থিক দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দলের ওপর বর্তাবে। দলগুলো গত ৬ ডিসেম্বর পিটি এ-তে (পার্টিসিপেটিং টিমস এগ্রিমেন্টে) সই করেছে। কিন্তু এখন ৩টি ক্লাব সেটা লঙ্ঘন করেছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়