চট্টগ্রামে অসহায়দের কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাশ টাকা বিতরণ

আগের সংবাদ

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে

পরের সংবাদ

ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী : লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না যেন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য ছাত্রলীগকে গড়ে তুলতে হবে ** নতুন ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে **
কাগজ প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রলীগকে পথ চলার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগ নিজেদের সুসংগঠিত রাখবে। কারণ এই ছাত্র রাজনীতি থেকেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কাজেই নিজেদের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। আদর্শবান কর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। খেয়াল রাখবে, কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না। নিজেকে শক্ত করে, সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়তে তোমাদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। সেভাবেই তোমাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্তে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের মূলপ্রান্তে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মাইনুদ্দীন হাছান চৌধুরী, ইকবালুর রহিম, অসীম কুমার উকিল, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, বাহাদুর বেপারি, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম জাকির হোসাইন। এছাড়া কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাবিসহ সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ছাত্রলীগ এই

দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছে। অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বুকের রক্ত দিয়েছে। কত চেনামুখ হারিয়ে গেছে। সেই ঐতিহ্য নিয়েই এই সংগঠন। ক্ষমতায় উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দল ছাত্রলীগ না, আওয়ামী লীগও না, আমাদের সহযোগী সংগঠনও না। আমাদের দল গণমানুষের দল। অধিকার হারা মানুষের কথা বলেই এই সংগঠন তৈরি। এই কথাটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের গর্বের বিষয়। কাজেই সেই গর্বটা থাকতে হবে। কিন্তু অহমিকা না। বিনয়ী হতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। যেটা জাতির পিতা বলে গেছেন। আমি এটুকু চাইব, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাও সবাইকে আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্বে সবসময় নিজেদের গতি ঠিক রেখে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই এ দেশের নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলো আমি মাথায় রাখি না, বিভ্রান্তও হই না। কারণ, আমরা সারাজীবনই দেখেছি এটা হচ্ছে, এটা হবেই। কিন্তু একটা আদর্শ নিয়ে চলতে গেলে, একটা লক্ষ্য স্থির করে চললে, বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে গেলে, যারা উপরে থেকে বেশি বেশি খায়, বেশি বেশি পায় তাদের তো একটু দুঃখ থাকেই। তারা ভাবে, আমাদের বোধ হয় জায়গা হবে না। সেজন্য ষড়যন্ত্র করতেই থাকে। আর কিছু লোকের তো লক্ষ্যই থাকে, একটা পতাকা পেতে হবে বা একটু ক্ষমতায় যেতে হবে বা ইত্যাদি। এই ধরনের যাদের আকাক্সক্ষা বেশি তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। তাই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি আদর্শ নিয়ে চললে, সৎ পথে চললে যে কোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা। বুলেট, গোলা, বোমা অনেক কিছুই তো মোকাবিলা করেছি। কাজেই ও নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু দেশটাকে যেখানে নিয়ে এলাম এই গতিটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই চাই। চিন্তাটা সেখানেই আবার যেন আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। ছাত্রলীগ এবং আমাদের যারা সহযোগী সংগঠন বা আমাদের আওয়ামী লীগ সবাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আবার যেন কখনোই হায়েনার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।
নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হওয়ায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে একটি সিদ্ধান্ত থেকে। যেদিন পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করল, দুর্নীতি হয়েছে। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম। বিশ্ব ব্যাংক যখন প্রমাণ করতে পারেনি তারপরেই বিশ্ববাসী বা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, এক সময় যাদের কাছ থেকে আমরা ঋণ নিলে তারা মনে করত যে আমাদের খুব করুণা করল। আমি কিন্তু সেই চিন্তা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছি, আমরা ঋণ নিয়ে সুদসহ সেটা শোধ দেই। এইটা কখনো অনুদান না। কাজেই আমরা এখন পরনির্ভরশীল না। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেটা আমরা দেখিয়েছি এবং পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে যে করতে পারি সেটা প্রমাণ করেছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না, বরং আমাদের সমীহ করে চলে। আমাদের এই অর্জনটা ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন- এদেশে তো কিছুই নেই আপনি কি দিয়ে এই দেশ গড়বেন? তিনি বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। এই মাটি, মানুষ দিয়েই আমি দেশ গড়ব। মাটি মানুষ দিয়েই যে দেশ গড়া যায় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই বিভ্রান্তির পথে না গিয়ে পাঠে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে এখন থেকেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কর্মদক্ষতারও পরিবর্তন ঘটবে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এখন থেকে তৈরি হতে হবে।
ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি এবং প্রগতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এগুতে হবে। কম্পিউটার শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেয়া- আমরা সবই করেছি। ২০০৮ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির ব্যবহার পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কাজেই মানুষকে আর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। মানুষের দৃষ্টি খুলে গেছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাস্ক না পরার বিষয়টি নজরে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার করোনার প্রাদুর্ভাব আসছে। কালকে খুব ভালো তোমাদের র‌্যালি হয়েছে। চমৎকার র‌্যালি করেছ তোমরা। তবে একটু খুঁত আছে। কারো মুখে মাস্ক ছিল না। আমি ভালো করে ছবিগুলো খুঁজে খুঁজে দেখেছি, একটা মাস্কও কেউ পরোনি। এখনো অনেকে বসে আছো মাস্ক ছাড়া। নতুন ভ্যারিয়েন্ট কিন্তু আরো মারাত্মক। কাজেই এ রকম জনসমাবেশে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। তোমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। অন্যরাও যাতে মাস্ক পরে তার ব্যবস্থা নেবে। তুমি যদি নিজে সুরক্ষিত না থাক, তাহলে অন্যকে সাহায্য করবে কীভাবে?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়