পরিকল্পনামন্ত্রী : দেশে রাজনীতিবিদের চেয়ে আমলাতন্ত্রের দাপট বেশি

আগের সংবাদ

শ্যামল দত্ত’র প্রত্যয় : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাবে ভোরের কাগজ

পরের সংবাদ

সংকট কাটাতে দরকার সংস্কৃতির জাগরণ : রামেন্দু মজুমদার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিদায়ী বছর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য ছিল কঠিন দুঃসময়। ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক। সংস্কৃতিজগতের অনেক গুণীজনকে আমরা হারিয়েছি। যাদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। করোনা ভাইরাসের মতো মহামারির এমন দুঃসময় স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশকের থিয়েটারের পথচলায় কখনো আসেনি। এ দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে হলে নতুন বছরে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতায় ভর করে করোনা ভাইরাসকে এক নম্বর শত্রæ বিবেচনা করে বাকি সমস্যাগুলোর মোকাবিলায় তৈরি হওয়া প্রয়োজন।
কেবল করোনার চ্যালেঞ্জ নয়, একটি মানবিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণে মানুষের চিন্তায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ অপরিহার্য। নামেমাত্র অনুদান দিয়ে সর্বগ্রাসী সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করা যাবে না। গত এক দশক ধরে আমাদের চাওয়া, দেশের মোট বাজেটের ১ শতাংশ হোক সংস্কৃতির। সেই চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে সংস্কৃতির বাজেট যেন কোনো কোনো বছরে আগের বছরের চেয়েও কমে যায়। বাজেটে সংস্কৃতি বরাবরই উপেক্ষিত হয়। সংস্কৃতির সবকিছুকে প্রাধান্য দেয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও তা শুধু মুখে মুখেই থেকে যায়। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায় না।
অথচ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিই হচ্ছে সংস্কৃতি। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সংস্কৃতি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সরকারের যে অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি, তা বাজেট বরাদ্দের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যাবে। বারবার সংস্কৃতিতে বাজেট বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছি আমরা। অথচ আমাদের কথা শোনাই হচ্ছে না।
কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে সৃষ্ট দেশের বাজেটে সংস্কৃতি খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, তাতে প্রত্যাশার কোনো প্রতিফলনই ঘটে না। ফলে সংস্কৃতি কর্মীদের হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।
অথচ মানুষের চিন্তায় ও মননে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ, এ ক্ষেত্রে বড়ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন। নামমাত্র অনুদান দিয়ে সর্বগ্রাসী সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করা যাবে না।
এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, একটি মানবিক, অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণে মানুষের চিন্তায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পাঠসূচিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাধ্যতামূলক করতেই হবে। প্রতি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা। একই সঙ্গে প্রতি উপজেলায় প্রথম শ্রেণির শিল্পকলা অফিসার এবং সংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আধুনিক মিলনায়তন ও মুক্তমঞ্চ নির্মাণ, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক দিতে হবে। অসচ্ছল শিল্পীকে মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিতে হবে। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে বার্ষিক এক লাখ টাকা অনুদান দিতে হবে।
জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক ফেডারেশন এবং জাতীয় পর্যায়ে অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎসব আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা সংবাদ সম্মেলন করেও আমরা বলেছি। কর্মহীন সংস্কৃতিকর্মীদের বিনা সুদে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া। দেশের প্রতিটি জেলায় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য আর্ট গ্যালারি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের জন্য মিনি মিলনায়তন নির্মাণ করা। আর করোনার ধাক্কা সামলাতে সরকারকে এইসব চ্যালেঞ্জগুলো নিতে হবে। সংস্কৃতি খাতে অনুদান না দিলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হবে না।
কারণ করোনায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সংস্কৃতিকর্মীরা সবাইই খুবই ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমি মনে করি, এ ক্ষতি পোষাতে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। আরেকটা কথা হচ্ছে, আমরা যদি দেশব্যাপী সংস্কৃতির জাগরণ চাই, শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক উৎসব দিয়ে হবে না। তৃণমূলে যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব আছে, ওদের প্রণোদনা দিতে হবে। যাতে তারা নিজেদের মতো করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়