বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য জান্নাত চেয়ে দোয়া : বহিষ্কার আ.লীগ নেতা

আগের সংবাদ

ইসির আগে আইন চায় জাপা : সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঁচজনের নাম প্রস্তাব

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সমঝোতা স্মারক সই > শ্রমবাজার ফের খুলছে : কর্মীদের সব খরচ নিয়োগকর্তার, সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কাটেনি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের জটিলতা কাটলেও অনেক কিছুই এখনো খোলাসা হয়নি। বিশ্বের অন্য ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যেভাবে কর্মী নেয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েই গেছে। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কর্মী নিয়োগে দুই দেশ সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে গতকাল রবিবার। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি মুরুগান সারাভানান এমওইউতে সই করেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল দাতু মুহাম্মদ খাইর আজমান-বিন মোহামেদ আনুয়ার, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমআইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম, শ্রম কাউন্সেলর জহিরুল ইসলামসহ দুদেশের সিনিয়র কর্মকর্তারা।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মালয়েশিয়া প্রান্তে বাংলাদেশি কর্মীদের সব খরচ বহন করবেন নিয়োগকর্তা। এই চুক্তির ফলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে। সঙ্গে অর্থনীতির চাকা আরো গতি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সমঝোতা স্মারকে অভিবাসন ব্যয় কোথাও উল্লেখ নেই। এতে ব্যয়ের টাকা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এমনকি সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানো উন্মুক্ত- সমঝোতা স্মারকে তা উল্লেখ না থাকায় এই শ্রমবাজার ফের সিন্ডিকেটের খপ্পড়ে পড়ার ইংগিত রয়েছে। আবার অনলাইনে মেডিকেল টেস্ট আবেদন করার কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়া অন্যরা এতে ঢুকতেই পারে না। এতেও সিন্ডিকেট স্পষ্ট। গতবার ৫ হাজার ৬০০ টাকা ফি দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ লোককে আনফিট বলা হয়। প্রতিশ্রæতি থাকলেও তারা ওই টাকা ফেরত পাননি। আবার রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করে তারা ফিট রিপোর্ট পান। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকা দিতে না চাওয়ায় তাদের আনফিট দেখিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষার নামে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা হাতানো হয়েছে। আবার ১০ লাখ কর্মীর চাহিদা থাকলেও গতবার মালয়েশিয়া যায় ২ লাখ ৭৬ হাজার কর্মী। যাদেরকে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। গতবারের ১০ জনের সিন্ডিকেটের বদলে এবার ৩০ জনের সিন্ডিকেট হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। নেপথ্যে এবারো বাংলাদেশি বংশদ্ভূত সেই মালয়েশিয়ান নাগরিক কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে কর্মীর ব্যাপারে সেখানকার নিয়োগ কর্তার কাছে ছিল না কোনো তথ্য। এবারো তাই করা হয়েছে। এতে কর্মীর বেতন নিয়ে ভোগান্তি হয়। গতবার সাড়ে চার হাজার কর্মী এ নিয়ে অভিযোগ করে প্রত্যেকে আড়াই লাখ টাকা করে ফেরত পেয়েছেন। তন্মধ্যে নোয়াখালীর রায়হান অন্যতম।
অবশ্য দেশের জনশক্তি রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বায়রার আশঙ্কা- সিন্ডিকেট থাকলে বাংলাদেশিদের জন্য ফের বন্ধ হবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আগামী বছরের জুলাই মাসে সেখানকার জাতীয় নির্বাচন। সিন্ডিকেট করা হলে ওই নির্বাচনের পর ফের বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
এমওইউ নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন- রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনায়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োগ এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/কোম্পানি বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায়, কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনে আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে উভয় দেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে, যা উভয় দেশ স্বীকার করে।
উল্লেখ, বাংলাদেশে বায়রার অন্তর্ভুক্ত ১৭৭৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ১০৪০টি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়মিত কর্মী পাঠিয়ে আসছে। এর মধ্যে কালো তালিকায় আছে ১৯৪টি রিক্রুটিং এজেন্সি। এছাড়া বায়রার সদস্য বহির্ভূত আরো কয়েকশ’ রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়। ফের কর্মী নিয়োগে উভয় দেশের মধ্যে কয়েকটি সভা হয়। গত ১০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে এমওইউ সইয়ে রাজি হয়েছে তাদের সরকার। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভানান জানিয়েছিলেন, এমওইউ সইয়ের পরপরই বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বৃক্ষরোপণ, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, সেবা, খনিতে উত্তোলন, নির্মাণ এবং গৃহকর্মের মতো খাতগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়