ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

আবরার হত্যা মামলা : ‘রায় প্রস্তুত’ না হওয়ায় ঘোষণা ৮ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় পিছিয়ে দিয়েছেন আদালত। রায়ের জন্য নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে ৮ ডিসেম্বর। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান গতকাল রবিবার এ দিন ধার্য করেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক এজলাসে এসে বলেন, ‘মামলার রায় এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হলো।’
বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। তখন ওই শিক্ষায়তনে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্র রাজনীতি।
প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে এসেছিল। দুপক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ১৪ নভেম্বর বিচারক এ মামলার রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ রেখেছিলেন। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পলাতক তিনজন বাদে আটক ২২ আসামিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার জন্য দুপুর ১২টায় নির্ধারিত হওয়ায় আসামিদের

আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এ সময় আসামিদের স্বজন, উৎসুক সাধারণ মানুষ ও আইনজীবীদের বাড়তি ভিড় দেখা যায়। এছাড়া রায়কে ঘিরে আদালত চত্বরে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। রায় ঘোষণার আগে আসামিদের পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করতে থাকেন। তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ করার কারণে তাদের সন্তানদের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এমন অভিযোগ করে মামলাটির ১৭ নম্বর আসামি অমিত সাহার মা দেবী সাহা কেঁদে বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। খুব কষ্ট করে তাকে বড় করেছি। সে ঘটনার দিন দুর্গাপূজার জন্য বাড়িতে ছিল। কোনো মেসেঞ্জার গ্রুপে তার এসএমএস ছিল না। আমার ছেলে ছাত্রলীগ করায় তাকে অপরাধী করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। একই অভিযোগ করে মামলাটির ২ নম্বর আসামি মুহতাসিম ফুয়াদের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করার কারণেই আমার ছেলেকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তবে আবরার হত্যায় জড়িতদের বিচার চান তিনি।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আসামিদের আদালতের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক দুপুর ১২টার কিছু পরে এজলাসে হাজির হয়ে ‘রায় প্রস্তুত নয়’ বলে আদেশে বলেন, মামলার সব সাক্ষ্য, তথ্য-প্রমাণ ও দুপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আজ (গতকাল রবিবার) ঘোষণা করা যাচ্ছে না। তাই রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হলো। এরপর আসামিদের আবার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তাদের স্বজনদের আহাজারি ও হাত নেড়ে বিদায়ে আদালত চত্বরের বটতলা প্রাঙ্গণে শোকের মাতম নামে।
রায় দেখতে আসা উৎসুক মানুষ অনেকে বলতে থাকেন, সবাই মেধাবী শিক্ষার্থী। ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে বাবা-মায়ের চোখের পানির কারণ হলো! এক আসামির মা কেঁদে চিৎকার করে বলেন, ‘তোর কিছুই হবে না। উপরে আল্লাহ আছে সোনা।’ ২৩ নম্বর আসামির ভাই বলেন, ‘আমরা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। রায়ে যদি প্রমাণ হয় আমার ভাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাহলে তার সাজা হোক। আমরাও চাই।’ এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘রায় পেছানোতে আমি হতাশ। তবে আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। যেন রায়টা দৃষ্টান্তমূলক হয়।’
রায় পেছানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ বলেন, শুক্র-শনিবার আদালত বন্ধ থাকার কারণে ৪৬ জন সাক্ষী ও আসামিপক্ষের ছয়জনের সাফাই সাক্ষী পর্যালোচনা করা ও রায় লেখা স্যারের (বিচারক) জন্য সম্ভব হয়নি হয়তো। তাই তিনি নতুন দিন ধার্য করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা সবাই জানি, মামলার রায় হবে। কিন্তু আদালত এজলাসে এসে বলেন, উনার প্রিপারেশন (প্রস্তুতি) নাই। রায় প্রস্তুত নয়। যেহেতু মামলাটি বড় ও চাঞ্চল্যকর। তাই তিনি হয়তো একটু সময় নিয়ে সাবধানতার সঙ্গে রায় বিশ্লেষণের সময় নিচ্ছেন। বিধান মতে, তিনি ২২ দিন সময় নিতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা আগেও বলেছি আবরার যে মারা গেছে, তার কোনো ডেথ সার্টিফিকেট (মৃত্যুসনদ) নেই। এছাড়া এ মামলায় যারা মাস্টার মাইন্ড (মূল পরিকল্পনাকারী) ছিল তাদের আনা হয় নাই। চার্জশিটে উল্লেখ আছে, বড় ভাইদের নির্দেশে মারছে। কিন্তু বড় ভাই কারা? কার নির্দেশে কাজটি হলো তা নেই। বুয়েট কর্তৃপক্ষের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অনেক দুর্বলতা রয়েছে। রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এত বড় ঘটনা ঘটল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। তারা বলছেন, ঘুমিয়ে ছিলেন। তাহলে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা কোথায়। কোনো সিসি টিভি ফুটেজ নাই। তারা বলছেন, ডিলিট হয়ে গেছে। আসলে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে বহিরাগতরা এসে আবরারকে হত্যা করে। আসামিরা নিরাপরাধ। সিসি টিভি ফুটেজ থাকলে তা প্রমাণ হতো।
মামলায় বলা হয়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর একই বছরের ১৩ নভেম্বর তদন্তে প্রাপ্ত আরো কয়েকজনকে আসামি করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
তাদের মধ্যে পলাতক তিনজন বাদে ২২ আসামি হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। পলাতক তিন আসামি হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
গত ১৪ নভেম্বর মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সব যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য গতকালকের দিনটি ধার্য করেন বিচারক। যুক্তি উপস্থাপনে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়। অন্যদিকে আসামিপক্ষ থেকে আসামিদের নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে খালাস চাওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়