টাইগ্রেসদের উড়ন্ত সূচনা পাকিস্তানকে হারিয়ে

আগের সংবাদ

খুনোখুনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ : অবৈধ অস্ত্রের পাশাপশি বেড়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার > চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান

পরের সংবাদ

শেষ বলের নাটকীয়তায় ধবলধোলাই টাইগাররা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল টাইগাররা। কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের অনুপস্থিতে এক ঝাঁক তরুণকে নিয়ে দল সাজান নির্বাচকরা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা বাবর আজমরা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের বিপক্ষে সিরিজ জিততে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। যারা বিশ্বকাপে ভারতকে ১০ উইকেটে হারায় হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় পেতে ভাগ্যের সহায়তা নিতে হয়েছে তাদের। এ দুই ম্যাচে ফলাফল নিষ্পত্তি হয়েছে শেষ ওভারে। গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে নানা নাটকীয়তার পর জয় পেয়েছে পাকিস্তান। ম্যাচের শেষ ওভারে গতকাল পাকিস্তানের ৮ রান দরকার, তখন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বল তুলে নিলে দর্শকদের মধ্যে শুরু হয় হইচই। ২০১৬ সালের বিপিএলে শেষ ওভারে বোলিং করে দুইবার ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড আছে মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রাইকে থাকা সরফরাজ আহমেদ প্রথম বলে কোনো রান নিতে ব্যর্থ হলে সেই আশার আলো জ্বলতে শুরু করে। পরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিলেন সরফরাজ। রোমাঞ্চ আরো ঘনীভূত হয় ওভারের তৃতীয় বলে হায়দার আলীর আউটে। তিনিও ছক্কা মারার চেষ্টায় ক্যাচ তোলেন লং অনে।
মাহমুদউল্লাহ তখন হ্যাটট্রিকের সামনে, নাটকীয়তা আরো জমে উঠল। পাকিস্তানের জিততে তখন দরকার ৩ বলে ৮ রান। সদ্য ক্রিজে

আসা ইফতেখার আহমেদ হ্যাটট্রিক বলেই বিশাল ছক্কা মেরে বল পাঠিয়ে দেন সাইটস্ক্রিনের ওপারে। পরের বলে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে বলটি অফ স্টাম্পের অনেকটাই বাইরে ঠেলে দিয়ে ইফতেখারকে ফাঁদে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। সেই বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন তিনি। শেষ দুই বলে তখন ২ রান দরকার পাকিস্তানের। পঞ্চম বলেই নেওয়াজকে আউট করেন রিয়াদ। শেষ বলে মুখোমুখি মোহাম্মদ নেওয়াজ। দুই রান নিলে ম্যাচ জিতে যাবে পাকিস্তান আর এক রান নিলে ম্যাচ গড়াবে সুপার ওভারে।
বাংলাদেশের জয়ের জন্য তখন ডট চাই, যে করেই হোক। ফিল্ডিং প্রস্তুত করলেন রিয়াদ, নিজেদের মধ্যে কথা বললেন ব্যাটসম্যানরাও। রিয়াদ বলও ছুড়লেন ঠিকঠাক, কিন্তু বল মাটিতে ড্রপ করার পর সরে যান ব্যাটসম্যান নেওয়াজ। স্টাম্পে আঘাত হানে বল।
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টাইগার সমর্থকদের মনে প্রশ্ন জাগে নেওয়াজ কি আউট ছিলেন? আম্পায়ারও বলটিকে ডেড বল হিসেবে ঘোষণা কি লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রতি অবিচার করেছেন। আউট হওয়ার পর পরই এ নিয়ে বাক্য বিনিময় হয় রিয়াদ ও নেওয়াজের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের ব্যাখ্যা মেনে নেন রিয়াদ। তাই এটি আর আউট নয়। আম্পায়ারও বলটিকে ডেড বল হিসেবে ঘোষণা দেন।
আম্পায়ারের ডেড বল ঘোষণা সম্পর্কে গতকাল ভোরের কাগজকে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান জানান, খেলার মাঠে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আম্পায়ার তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, তিনি যা বলবেন তাই সঠিক। বল করার সময় মাহমুদউল্লাহ আম্পায়ারের পেছন থেকে করেছেন। দ্রুত বল ছুড়েছেন। ব্যাটসম্যান সরে গিয়েছেন। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান বুঝিয়েছেন তিনি প্রস্তুত নন। তাই সরে গিয়েছেন। এ ম্যাচ এবং সিরিজ হারলেও টাইগাররা পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা লড়াই করতে জানে।
গতকাল ম্যাচটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত জিতে নেয় পাকিস্তান। মাহমুদউল্লাহর ওই বলে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন নেওয়াজ। ৫ উইকেটের জয় পায় সফরকারীরা। এই ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান।
শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহর বলে নেওয়াজের বোল্ড আউট এবং ডেড বল ঘোষণা সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার অলক কাপালি গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, রিভিউ নেয়ার সুযোগ থাকলে নেয়া উচিত ছিল। মনে হয়েছে পাকিস্তানের নেওয়াজ আউট হয়েছেন। আম্পায়ার কেন আউট দিলেন না বুঝতে পারছি না। আম্পায়ার যেহেতু কাছ থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, তাই তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার কাছে মনে হয়েছে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তিনি ডেড বল ঘোষণা করেছেন। প্রথম ম্যাচে ১২৭ এবং গতকাল ১২৪ রান করেও পাকিস্তানকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। এ দুই ম্যাচে স্কোরটা একটু বড় হলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা জিতলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকত না।
গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ৭ উইকেটে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো পাওয়ার প্লের সুযোগ কাজে না লাগিয়ে শ্লথ গতিতে খেলতে দেখা গেছে তাদের। নাঈম এক প্রান্ত আগলে খেলেছেন কিন্তু পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ ছিলেন। মাঝে শামীম-আফিফ পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। তবে নাঈমের ব্যাট থেকেই এসেছে সর্বোচ্চ ৪৭ রান। খেলেছেন ৫০টি বল। শামীম ২৩ বলে ২২ ও আফিফ ২১ বলে ২০ রান করেছেন।
পাকিস্তানের হয়ে ১৫ রানে দুটি উইকেট নেন পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম। ৩৫ রানে দুটি উইকেট নেন লেগ স্পিনার কাদির। একটি করে উইকেট নেন শাহনেওয়াজ দাহানি ও হারিস রউফ। বাংলাদেশের ১২৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ১২৫ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের সতর্ক শুরুতে ৩২ রান যোগ তোলে। সপ্তম ওভারে মেরে খেলতে গিয়ে তালুবন্দি হন অধিনায়ক বাবর আজম। আমিনুল ইসলামের লেগ স্পিনেই বিপদ ডেকে আনেন তিনি। ১৯ রান করে ক্যাচ তুলে দেন নাঈমের হাতে। এরপর পাকিস্তানের ইনিংস সামলেছেন মূলত রিজওয়ান-হায়দার আলী। দুজনে ৫১ রানের জুটি গড়লেও সেটি ছিল ধীরগতির। রানের চাপ বেড়ে যাওয়ার মুহূর্তেই জুটি ভেঙে বাড়তি চাপ সৃষ্টির মুহূর্ত এনে দিয়েছিলেন অভিষিক্ত শহীদুল। তার বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন রিজওয়ান (৪০)। অথচ এই চাপ সৃষ্টির ওভারেই দুটি ছয় মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল সফরকারীরা।
শেষ ওভারের নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা মাহমুদউল্লাহ এক ওভার বল করে ১০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। পাকিস্তানের অন্য উইকেট দুটি তুলে নেন শহীদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম। ম্যাচসেরা হায়দার আলী ও সিরিজসেরা হয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়