গুলশানের ইউনিমার্ট ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

আগের সংবাদ

ধাক্কা কাটিয়ে চাঙ্গা অর্থনীতি

পরের সংবাদ

আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিচ্ছে পিপলস লিজিং

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পি কে হালদারকাণ্ডে আলোচনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং এন্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে শুরু করেছে। হাইকোর্টের গঠিত প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গত মাস থেকে স্বল্প পরিসরে গ্রাহকদের এ আমানত দেয়া শুরু করে। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৪৮ জন আমানতকারীকে ২ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির নবগঠিত কর্মকর্তারা। তবে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, যে পরিমাণ টাকা দেয়া হচ্ছে তাতে তাদের কোনো কাজে আসছে না। এমনকি কোর্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাও পালন করা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিপলস লিজিংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, কোর্ট থেকে নির্দেশনা ছিল, যারা দুস্থ, অসুস্থ- তাদের কিছু কিছু যেন সহযোগিতা করা হয়। এ কর্মকর্তা বলেন, একটু একটু করে শুরু করেছি। কোর্টের অর্ডার অনুযায়ী পলিসির আন্ডারে দেয়া হচ্ছে। টাকা রিকভারি শুরু হয়েছে মাত্র। এই মুহূর্তে যে টাকা সংগ্রহ করা যাচ্ছে, সেটাই আমানতকারীদের দেয়া হচ্ছে। আমাদের আসল লক্ষ্যই হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব রিকভারি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া। আমানতকারীরা তাদের টাকা সম্পূর্ণ পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সময়ই বলে দেবে। রিকভার করতে পারলে পাবে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার কামাল-উল আলম বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেয়া হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে বোর্ড এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। আমরা মাসে ১ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছি। একজন আমানতকারী তার মোট আমানতের ১০ শতাংশ পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন, তবে পরিমাণটি ৫ লাখ টাকার বেশি হবে না। তিনি বলেন, এখন সব আমানতকারীকে ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। আমরা কোম্পানির সম্পদ এবং দায় আবারো পরীক্ষা করছি। নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত খেলাপিদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি আদায় করছে বলে জানান তিনি।
পিপলস লিজিং ডিপোজিটর এসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক সামিয়া বিনতে মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, কোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইইসির চেয়ারম্যানকেও কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। অথচ বিএসইসির চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন। আগামীকাল (আজ সোমবার) বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হবে। তিনি বলেন, গত ১২ জুলাই কোর্ট নতুন পর্ষদ গঠন করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে। চার মাসের বেশি সময় পার হয়েছে, অথচ কেউ জানে না, তাদের কাজের অগ্রগতি।
নতুন কর্মকর্তারা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছে জানতে চাইলে সামিয়া বলেন, চার মাস আগে গঠিত নতুন বোর্ড আমানত ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। বর্তমানে যে টাকা ফেরত দিচ্ছে তাতে দুই কোটি টাকা পাওনা হলে তাকে প্রমাণ দেখাতে হবে, বয়স্ক, বিধবা বা অসুস্থ। এত কিছুর পরে দুই কোটি টাকার বিপরীতে তারা দেবে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।
তিনি আরো বলেন, তারা অল্প পরিমাণে ফেরত দিচ্ছে, কিন্তু আমরা এই ধরনের সাহায্য চাই না। আমরা আমাদের সমস্ত টাকা ফেরত চাই। প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের টাকা পাচ্ছি না। এটা তো আমাদের কারণে বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তারা কোনো ধরনের তদারকি করেননি এই সাড়ে চার মাসে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন পর্ষদ কী করছে তা পর্যবেক্ষণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্যদিকে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মকর্তারাও কোম্পানিটির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে নতুন বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে।
কোর্টের নির্দেশনায় যা আছে : ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে বসা পিপলস লিজিংকে অবসায়নের পরিবর্তে পুনরুজ্জীবিত করতে গত ১২ জুলাই ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট, যার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল-উল আলম। পর্ষদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন। অন্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সাবেক জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ হাসান শাহীদ ফেরদৌস, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) কাজী তৌফিকুল ইসলাম, ফেলো চার্টার্ড একাউন্টেন্ট নুর-ই-খোদা আব্দুল মবিন, মওলা মোহাম্মদ, আমানতকারীদের প্রতিনিধি ড. নাশিদ কামাল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান নুরুল কবির।
প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় আদালত একই সঙ্গে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতাসহ পর্ষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি ও দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চেয়ারম্যানদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে।
আমানতকারীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমানত ফেরত পেতে আগামী ছয় মাস তারা পিএলএফএসএলের পর্ষদের কাছে দাবি জানাতে পারবে না। তবে মানবিক কারণে পর্ষদ কোনো আমানতকারীর আমানত ফেরত দিতে পারবে। অন্যদিকে আদালত নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় জনশক্তি নিয়োগ করতে বলেছে। এক্ষেত্রে আদেশে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পি কে হালদার বা তার সহযোগী নয় এবং অন্যান্য খেলাপি পরিচালকদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পুনঃনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
পিএলএফএসএলের পর্ষদকে কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং নবগঠিত পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দিয়ে আদালত আদেশে বলেছে, ‘চূড়ান্ত অব্যাহতি দিয়ে আদালতের আদেশ না হওয়া পর্যন্ত পিএলএফএসএলের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সাময়িক অবসায়ককে (অকার্যকর) সংযুক্ত রাখবেন।’ এছাড়া পিএলএফএসএলকে উদ্বুদ্ধ করতে বিকল্প হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘অর্থ উদ্দীপনা প্যাকেজ’ চালু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গভর্নরকে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘যদি তিনি এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পান তবে কোম্পানির কার্যক্রম, সক্ষমতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ অনুযায়ী পিএলএফএসএল পুনর্গঠন বা অন্যকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানকে পিএলএফএসএলের পুনরুজ্জীবিত করার খবর বিএসইসির অফিসিয়াল ওয়েব পেইজে এবং সংবাদপত্রে প্রচার-প্রকাশের জন্য নির্দেশনাসহ প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনায় পর্ষদকে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিতে বলেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়