ফরিদপুর প্রতিনিধি/ফরিদপুর শহর প্রতিনিধি : কুমার নদের পাড়ে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের বাড়ির আঙিনায় গতকাল শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোরের কাগজের ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম পর্বের সূচনা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বিপিএম, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামীম হক, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস এবং ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপক এস এম এ রাজ্জাক, সার্কুলেশন ইনচার্জ তসলিম চৌধুরী, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক সুজন নন্দী মজুমদার, আইটি ইনচার্জ মেহেদী হাসান নিয়াজ, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সম্মেলনের সব বক্তাই কবি জসীম উদ্দীনের বাড়ির আঙিনায় বিভাগীয় সম্মেলন আয়োজন করায় ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
সম্মেলনের শুরুতেই কবি জসীম উদ্দীনের জীবনীর ওপর প্রবন্ধ পাঠ করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রেজভি জামান।

এতে তিনি বলেন, জসীম উদ্দীন সর্বদাই সমাজতন্ত্রবাদী চেতনার মানুষ ছিলেন এবং তিনি প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন। কবিতা, নাটক ও স্মৃতিকথার মধ্য দিয়ে আমাদের পল্লীসাহিত্যকে দেশে-বিদেশে তুলে ধরেছেন তিনি। তার সাহিত্য নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ভোরের কাগজ যে চেতনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল তার ধারাবাহিকতা আগামীতেও রক্ষা করে সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভোরের কাগজ তার লিখনীর মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণেও ভোরের কাগজের অবদান রয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, ভোরের কাগজ সমাজের নানা বিশৃঙ্খলা ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনারা বিশৃঙ্খলা তুলে ধরলে আমরা সেখানে কাজ করতে পারব।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, দৈনিক ভোরের কাগজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি দৈনিক। বহুপথ অতিক্রম করে পত্রিকাটি ৩০ বছরে পদার্পণ করেছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিল ভোরের কাগজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য ভোরের কাগজের তথ্যবহুল সংবাদের অবদান অনস্বীকার্য।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, ফরিদপুরে ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলন আয়োজনে সার্বিক সহায়তা করতে পেরে আমি আনন্দিত। অন্যান্য জেলার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা গর্ব করতে পারেন, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি পত্রিকায় কাজ করেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সমাজসেবক শামীম হক তার বক্তব্যে পত্রিকার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানান।
ভোরের কাগজ সম্পাদক তার বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৈতিকতা ও আদর্শ বুকে ধারণ করে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মুক্ত প্রাণের প্রতিধ্বনি ও মুক্তিযুদ্ধকে বুকে ধারণ করে ভোরের কাগজ কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও ভোরের কাগজ মুক্তিযুদ্ধকে চেতনা হিসেবে সামনে রেখে কাজ করে যাবে। ভোরের কাগজ একটি ছোট কাগজ, আমি সেই ছোট একটি জায়গা থেকেই আমার কাজ চালিয়ে যাব আপনাদের সঙ্গে নিয়ে। অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নজরুলের আদর্শ, জসীম উদ্দীনের আদর্শ, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমি এগিয়ে যাবই। এটি আমাদের একটি ধারাবাহিক যুদ্ধ ও সংগ্রাম। এই জায়গাটি ভোরের কাগজ কখনো কম্প্রোমাইজ করবে না, অতীতে করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তা না হলে ভোরের কাগজ আর ভোরের কাগজ থাকবে না। আমি মনে করি, ভোরের কাগজের প্রতিনিধিরা সবাই এই চেতনায় বিশ্বাস করেন। সবাইকে এই জায়গাতে আসতে হবে, না হলে ভোরের কাগজের প্রতিনিধি হতে পারবেন না। আমি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি, আমার সব প্রতিনিধি এই চেতনার জায়গায় আপস করবেন না।
সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন ভোরের কাগজের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি মশিউর রহমান খোকন। সহযোগিতায় ছিলেন ফরিদপুর শহর প্রতিনিধি বিভাষ দত্ত, আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি কবির হোসেন, বোয়ালমারী প্রতিনিধি কামরুল সিকদার, নগরকান্দা প্রতিনিধি নকিব নিজাম, সদরপুর প্রতিনিধি মো. নুরুল ইসলাম, চরভদ্রাসন প্রতিনিধি মো. আসলাম বেপারি, সালথা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম, মধুখালী প্রতিনিধি অঞ্জন সাহা রানা, ভাঙ্গা প্রতিনিধি মোহাম্মদ রমজান আলী।
ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে ১৭টি জেলা ও উপজেলার প্রতিনিধি অংশ নেন। এতে যোগ দিতে ১৯ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল থেকেই প্রতিনিধিরা ফরিদপুরের হোটেল রাজস্থানে জমায়েত হন। সম্পাদক শ্যামল দত্ত রাতে সেখানে উপস্থিত হয়ে সবার খোঁজখবর নেন এবং দিকনির্দেশনা দেন। প্রতিনিধিরা কবি জসীম উদ্দীনের বাড়ি, ডালিম গাছের তলায় দাদীর কবর, সোজন বাদিয়ার ঘাট, কবি জসীম উদ্দীন মিউজিয়াম ঘুরে দেখেন। ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস।