জামালদের বিদায় করে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আগের সংবাদ

বাস মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া : এখনো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় > গেটলক-সিটিং সার্ভিস বহাল > বিআরটিএর তৎপরতা লোক দেখানো

পরের সংবাদ

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** প্রায় ৪০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি ** সমস্যা হলে ১ সেকেন্ডের কম সময়ে সব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে ** কো-কেচার যন্ত্র নিজেই দূষিত তেজস্ক্রিয়তা ধারণ করবে **
দেব দুলাল মিত্র : রূপপুরে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। গত রবিবার প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন হয়। বলা হয়ে থাকে রিয়্যাক্টর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে পাওয়ার প্লান্টের কমিশনিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটা অনেক বড় অগ্রগতি। কিন্তু তারপরেও ঘুরেফিরে প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়টিই বারবার আলোচনায় আসছে। নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে আবার রাশিয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রসাটমের পক্ষ থেকেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো প্রকল্পের সার্বিক কাজের প্রায় ৪০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এই অগ্রগতি ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে। দেশের প্রথম নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্র ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্ট এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২টি ইউনিটে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় এ ধরনের রিয়্যাক্টর প্রথম শ্রেণির নিরাপদ যন্ত্র। এটি একটি লম্বা সিলিন্ডার আকৃতির উপবৃত্তাকার তল বিশিষ্ট পাত্র। ওপরের অংশটি একটি ডুম বা বড় ধরনের ঢাকনা দিয়ে শক্তভাবে আটকানো থাকে। একই সঙ্গে ড্রাইভ মেকানিজম, রিয়্যাক্টরের নিয়ন্ত্রণ, সুরক্ষা এবং নজেলের মাধ্যমে রিয়্যাক্টরের নিয়ন্ত্রণ সেন্সরের তারগুলোকে বাইরে নেয়ার ব্যবস্থা থাকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ১ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে দূষিত তেজস্ক্রিয়তা বাইরে ছড়ানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। উপরন্তু ‘কো-কেচার’ যন্ত্রটি নিজে থেকেই সব ধরনের দূষিত তেজস্ক্রিয়তা ধারণ করে সংরক্ষণ করবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও

প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, আমরা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো আপস করব না। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে বিশ্বের কোথাও কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ‘কো-ক্যাচার’ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়নি। জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মারাত্মক দুর্ঘটনার পর ‘কো-ক্যাচার’ যন্ত্রটি আবিষ্কৃত হয়। প্লান্টের দূষিত পদার্থ এই কো-ক্যাচারে জমা হবে, তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনো ভয় নেই।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ সরকারই নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে তা নয়, সারাবিশ্বের পারমাণবিক প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের যত নিয়ম আছে তা পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে। ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্ট বা জেনারেশন থ্রি প্লাস চুল্লি স্থাপন করা হবে। এই চুল্লির মেয়াদ ৬০ বছর এবং আরো ২০ বছর বাড়ানো যেতে পারে। এ ধরনের রিয়্যাক্টর রাশিয়ার নভোভোরোনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়। এই রিয়াক্টরগুলো সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রূপপুর প্রকল্পের রেডিয়েশন মনিটরিং করবে স্পেকট্রোমিটার। প্রকল্পের উভয় ইউনিটের স্বয়ংক্রিয় রেডিয়েশন মনিটরিংয়ে এক ধরনের বিশেষ স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উভয় ইউনিটের প্রোডাকশন লাইন ও গবেষণাগারের নিরাপত্তা এবং জনগণের শরীরে রেডিয়েশন ডোজ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে তেজস্ক্রিয় রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপ করা হবে। রাশিয়ার রোসাটম অটোমেটেড কনট্রোল সিস্টেমসের (আরএএসইউ) অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্যাল এন্ড টেকনিক্যাল প্রবলেমস (আইপিটিপি) রূপপুর প্রকল্পের জন্য ১৬ সেট স্পেকট্রোমিটার তৈরি ও সরবরাহ করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার পরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। সেসব বিষয়গুলোর ওপরেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর পর গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সির হেভি ফ্লাকচুয়েশনের কারণে যদি বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালানো যায় -সেটাও চ্যালেঞ্জ হতে পারে। জরুরি মুহূর্তে কাজ করার জন্য গঠিত রেগুলেটরি টিমে সর্বোচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন লোকজনকে রাখতে হবে। তা না হলে এটাও চ্যালেঞ্জ হবে। প্লান্টে কাজ করার জন্য দক্ষ জনবলের কোনো বিকল্প নেই। জনবল অভিজ্ঞ তৈরি করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই সার্বিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত সব জিনিসের মান কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। সবকিছু মিলিয়েই প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, নিরাপত্তার সবগুলো বিষয় আমাদের নজরে রয়েছে। এই প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কোথাও বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছি না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকে শতভাগ নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছি। প্রকল্পে ব্যবহৃত সব যন্ত্রাংশ রাশিয়ায় তৈরি হচ্ছে। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনবল তৈরি করা হচ্ছে। ভিভিইআর ১২০০ পাওয়ার ইউনিট ব্যবহার করা হচ্ছে। এর চেয়ে ভালো যন্ত্রাংশ এখনো বিশ্বের কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমরা তৈরি করছি।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ জানিয়েছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া বহু দশক ধরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক ভাবনাগুলোর সমন্বয় ঘটিয়েছে। সক্রিয় (একটিভ) এবং স্বয়ংক্রিয় (প্যাসিভ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৯০ ভাগ অর্থ দিচ্ছে রাশিয়া। দুইটি ইউনিটে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়