জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

নীরব কান্না ও ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় : মতিহারেই চিরনিদ্রায় হাসান আজিজুল হক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যে মতিহারে ছিল তার নিত্য যাতায়াত, যে প্রাঙ্গণ থেকে স্বপ্নের আগুন পাখিদের উড়িয়ে দিতেন তিনি, সেখানে সেই উচ্ছল-উজ্জ্বল মানুষটি এলেন নিথর দেহে। এই বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়কে সর্বস্তরের মানুষের নীরব কান্না আর ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানানো হলো সেখানেই।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীবাসী, পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শায়িত হলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হক। আগের দিন সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির বাসভবন উজান-এ জীবনের ইতি টানেন তিনি। তার আগে দীর্ঘদিন থেকে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসান আজিজুল হককে তার কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে দুপুর ১২টায় তার মরদেহ নেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আগে থেকেই পুষ্পস্তবক নিয়ে লম্বা সারি দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন অগণিত মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে।
ঘণ্টাব্যাপী চলে শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা। সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বহু সাধারণ মানুষ এসেছিলেন বরেণ্যে এই লেখককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম, রাজশাহী-৩ (পবা ও মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-ছাত্র-অনুরাগীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, হাসান আজিজুল হক ছিলেন আমাদের এক বটবৃক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে যত অশুভ শক্তি উত্থিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন তিনি এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু একজন কথাসাহিত্যিকই নন, তিনি একাধারে একজন দাপুটে মঞ্চ অভিনেতা, পথ প্রদর্শক এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রাজনীতির মাঠে এক লড়াকু যোদ্ধা।

তিনি যখন চলে যান তখন আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। এ রকম ছায়া দেয়ার মতো মানুষের অভাব রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, স্যার বাংলা সাহিত্যের যে মাপের মানুষ ছিলেন তাতে একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। যখনই বাঙালি জাতীয়তাবাদ সংকটে পড়েছে তখনই আমরা স্যারের কাছে গিয়েছি, তার উচ্চকিত যে আহ্বান ছিল তা আমাদের পথ দেখাত। আমরা যদি হাসান স্যারকে অনুধাবন করি, ধারণ করি তাহলে স্যার আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবেন না।
শহীদ মিনারে ভক্তদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে সমাহিত করা হয়।
এদিকে হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শোক জানিয়েছে বাংলা একাডেমি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়