জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানুন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ব-দ্বীপসম এই দেশটি আয়তনের তুলনায় আনুপাতিক হারে জনসংখ্যা কয়েকগুণ বেশিই বলা চলে। দেশে নিম্ন আয়ের মানুষ রাজধানী ঢাকা থেকে মফস্বল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে বিস্তৃত। এখন আবার করোনা ভাইরাস আক্রমণ, মহামারি-পরবর্তী নতুন করে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়ে ৩ কোটি ছাড়িয়েছে! বেঁচে থাকতে মানুষের আহার্য, নিত্যকার জিনিসপত্রের জোগান, সংগ্রহ প্রতিনিয়ত করতেই হয়। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে উচ্চ বেতনধারী সবাই আজ জীবন চালাতে সংকটময় অবস্থায় পড়েছেন।
কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ? অস্থির বাজারদর নিত্যপণ্যের। চাল, ডাল থেকে শুরু করে কাঁচাবাজারেও হু হু করে বেড়ে চলেছে।
আমি নিজেই সংসারের বাজার সদাই-পাতি করি বিধায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি পুঙ্খানুপুঙ্খ অবগত আছি। নাজিরশাইল হাফ সিদ্ধ চাল আগে কিনতাম ৬৬ টাকা। আর এখন কিনছি ৭৫ টাকা! ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ৮২ টাকা, ছোট দানা মসুর ডাল ১২০ টাকা। অ্যাংকর ডাল আর মুগ ডালেরও একই অবস্থা। ভোজ্যতেল ৫ লিটার কিনেছি ৭২০ টাকা। যা পূর্বে ছিল ৬৭০ টাকা। আগে ফরচুন খেতাম। এখন দামের ঘোড়ার লাগাম ছাড়া দেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আর ভাবছি না। কোনো রকম বেঁচে থাকাটাই এখন মুখ্য। দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, দেশি রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
দ্রব্যমূল্য বাড়লে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়ে সমানতালে। গেল দুই অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ধাপে ধাপে তা ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। নভেম্বর মাসে আরো বাড়ে মুদ্রাস্ফীতি। এসব কিছুর দায় বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ওঠা-নামার ওপর দিলেই হবে না কেবল; আড়তদার, মজুমদারদের একটি দুষ্টচক্র হরহামেশাই সারা বছর দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি করার জন্য সমান দায়ী। অথচ ন্যূনতম মানবিকতা বোধের চর্চা যদি মানুষের থাকত তাহলে আমাদের কাছে এই অশনিসংকেত মরণফাঁদ এসে সামনে দাঁড়াত না।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলা বাজারে পণ্য বিক্রিতেও একই হাল। কয়েকদিন আগে দ্রব্যাদি কিনতে গিয়ে দেখা গেল আগের চেয়ে দাম এখন কিছুটা বাড়তি। তাদেরও একই কথা- বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য বেশি! কোথায় গেলে সাধারণ মানুষের আহার্য জুটবে নাগালের ভেতর; এখন তা কেউ বলতে পারবে না। এমনি একটি ধোঁয়াশা সংকটের সময়কাল চলছে। মানুষের আয় যতটা না বেড়েছে তার চেয়ে খরচের পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। বাংলাদেশ ব্যুরো খানা আয় ব্যয় জরিপে ২০১৫ সালের জরিপে দেখা যায়- নিম্ন আয়ের মানুষের মাসিক গড় আয় ৪ হাজার ৬১০ টাকা, যা এর আগের তুলনায় ৫৩৯ টাকা কম। বিপরীতে সবচেয়ে উচ্চ আয়ের মানুষের মাসিক গড় আয় বেড়েছে ৪৫ হাজার ১৭২ টাকা। তবে এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য পাওয়া দুষ্কর।
সরকারের দরকার মাঠ পর্যায়ে এখনই সাঁড়াশি অভিযান চালানো, কড়া নজরদারি বাড়ানো। একটি রাষ্ট্রের সুখ-শান্তি নির্ভর করে সরকারের যুগোপযোগী জনগণের কল্যাণে গৃহীত সফল পরিকল্পনা এবং তার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন। সরকারের ক্লিন ইমেজ তৈরিতেও এটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগামিতা রোধকল্পে সরকারের উচিত আড়তদার, মজুদদারদের সঙ্গে আন্তরিক মিথষ্ক্রিয়া, আলোচনা ও শুল্কমুক্ত খাদ্যদ্রব্য, পণ্য সরবরাহ করা। যেন তারা কোনোভাবেই বাহানা ধরতে না পারে। পেঁয়াজ পচে সাগরে ফেলে দেয় অথচ সাধারণ জনগণ খেতে পায় না- এ কেমন কথা? যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ানো হচ্ছে সেভাবে তো কখনোই বেতন বাড়ানো হয় না! তাহলে মানুষ কীভাবে খেয়ে-পরে নিরাপদ বাসস্থানে বেঁচে থাকবে? সরকারের উচিত এখনই দ্রব্যমূল্যের নাগাল টেনে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের অন্তরায় চলতি কোনো ফাঁকফোকর থাকলে তা এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দিন এবং জনজীবন সচল চলনসই রাখতে এখনই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা সময়ের দাবি।
পারভীন আকতার
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়