জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

জীবন রহস্য উন্মোচন হালদার ৪ প্রজাতির মাছ ও ডলফিনের

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর কার্প জাতীয় চার প্রজাতির মাছ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের জীবন রহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্স) করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক। গাঙ্গেয় ডলফিনসহ রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের জীবন রহস্য উন্মোচন বিশ্বে এটাই প্রথম। এই গবেষণা হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া এসব জলজ প্রাণীর নানা বৈশিষ্ট্যও জানা যাবে। জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে কার্প জাতীয় এ মাছগুলোর ‘বিশেষত্বের’ দিকগুলো জানা সম্ভব হবে জানিয়েছেন গবেষকরা। তবে এর আগে ভারতের গঙ্গা নদীর রুই ও কাতলার জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন দেশটির গবেষকরা। আর যুক্তরাষ্ট্র উন্মোচন করেছে আটলান্টিক মহাসাগরের ডলফিনের জীবন রহস্য। বিশ্বের জিনোম সিকোয়েন্সবিষয়ক তথ্যভাণ্ডার হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) ডেটা ব্যাংকে এ

গবেষণার ফল জমা দেয়ার পর অনুমোদনও পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ও হ্যাচারিসংবলিত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। কার্প জাতীয় এ মাছগুলোর জীবন রহস্য উন্মোচনের জন্য প্রায় দুই বছর ধরে চলা এ গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী। এছাড়া এ গবেষণায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুমা আক্তার, নাজনীন ইসলাম, সাবিহা মুস্তফা অর্পা, আব্দুল্লাহ আল আশেক এবং আজলিনা কবির। একই সঙ্গে এ গবেষণায় চীনের নর্থ-ওয়েস্ট এএনএফ ইউনিভার্সিটি এবং নিউজিল্যান্ডের টেক্সটজেন ইনফরমেটিকস নামের একটি সংস্থার ল্যাবরেটরির সহযোগিতাও নেয়া হয়েছে। এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)।
জানা গেছে, দুই বছরে হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও মিঠা পানির ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। এতে মোট ৮২ হাজার ৭৮৮টি জিন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রুই মাছের ১৬ হাজার ৬০৯টি, কাতলা মাছের ১৬ হাজার ৫৯৭টি, মৃগেল মাছের ১৬ হাজার ৬০৭টি, কালবাউস মাছের ১৬ হাজার ৬২০টি ও মিঠা পানির ডলফিনের ১৬ হাজার ৩৬৫টি জিন শনাক্ত করা হয়।
অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ডলফিনের প্রজাতি ‘প্লাটানিস্টা গাঞ্জেটিকা’র পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস করার মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। হালদা নদী বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রজনন ক্ষেত্র। কার্প জাতীয় মাছ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও হ্যাচারিতে বড় হওয়া মাছের জেনেটিক পার্থক্য নির্ণয়ে বিভিন্ন তুলনামূলক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে বন্য পরিবেশে বড় হওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের কোনো পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস করা হয়নি। তাই আমাদের এই গবেষণা হ্যাচারি ও বন্য পরিবেশে বড় হওয়া ওই প্রজাতিগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইনব্রিডিং সমস্যাসহ পরিবেশগত পরিবর্তন, অসুস্থতা, রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ‘জৈবিক প্রক্রিয়া’ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
তিনি আরো বলেন, মিঠা পানির ডলফিনকে আমরা শুশুক বলি। সেটি বিপন্ন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। ভারতের গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোতে এদের বাসস্থান হওয়ার কথা। ভৌগোলিকভাবে হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীর অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোর সঙ্গে চট্টগ্রামের এই নদীগুলোর কোনো সংযোগ নেই। এমনকি অতীতেও সংযুক্ত থাকার কোন প্রমাণ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীতে এই ডলফিনের আগমন, বিস্তৃতি এবং অবস্থান এত দিন রহস্যাবৃত ছিল।
অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, গত কয়েক মাসে হালদা নদীতে বেশ কয়েকটি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আমরা একটির ময়নাতদন্তও সম্পন্ন করেছি। হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও মিঠা পানির ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং হওয়ায় এখন এই নদীর ডলফিন কেন মারা যাচ্ছে, তা জানা যাবে।
জীবন রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে গবেষকরা বলছেন, অত্যাধুনিক এনজিএস (ঘএঝ) প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার সফ্টওয়্যার (ইরড়রহভড়ৎসধঃরপং) ব্যবহারের মাধ্যমে উন্মোচিত তথ্য একটি ড্রাপ্ট জিনোম ডাটাবেস তৈরি করা, যা ভবিষ্যতের গবেষণাকে আরো সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া এ গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিকীকরণ ও হালদার ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে তথ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে বিবর্তনের উৎস (ঊাড়ষঁঃরড়হধৎু ঙৎরমরহ) হিসেবে হালদার কার্প ও ডলফিনের জিনোমের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়