দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

শাহজাদপুরে কুমড়া বড়িতে ২শ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আব্দুল কুদ্দুস, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক দরিদ্র পরিবার কুমড়ার বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অর্ধশত বছরের এ ঐতিহ্য এখন গৃহস্থের বাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন হচ্ছে। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজ। অনন্য স্বাদের এ কুমড়ার বড়ি তৈরি হয় ডাল আর কুমড়ার মিশ্রণে।
হরেক রকম ডাল দিয়ে এ বড়ি তৈরি হলেও অ্যাংকর ও মাসকলাই ডালের বড়ির চাহিদা একটু বেশি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহসহ বিদেশেও যাচ্ছে শাহজাদপুরের কুমড়ার বড়ি। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার কুমড়ার বড়ি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া উপজেলার পোরজনা জামিরতা ধীতপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম মিলিয়ে দুই শতাধিক পরিবার কুমড়ার বড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ পরিবারগুলো শীত মৌসুমের পুরোটাই কুমড়ার বড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাড়ির নারীরাই মূলত এ বড়ি তৈরি করেন। পুরুষরা বাজারজাত করেন। এতে তারা মৌসুমে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের কুমড়া বড়ি উৎপাদনকারী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। একটা সময় অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আগে সারাদিন ডাল ভিজিয়ে রেখে শিল-পাটা দিয়ে বেটে বড়ি দিতে হতো। এতে সময় লাগত অনেক বেশি। এখন শিল- বাটার বদলে ডাল মেশিন দিয়ে ভাঙানো হয়। এতে আমাদের খাটনি কমেছে ও সময় বেঁচে যাচ্ছে। এতে এখন বেশি বড়ি তৈরি করতে পারছি।’
তালগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সাধারণত ডাল ভিজিয়ে মেশিনে গুঁড়া করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বড় গামলা বা বালতিতে ডালের গুঁড়া, পাকা চালকুমড়া, কালোজিরা, গোলমরিচ এবং মসলা মিশিয়ে সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। এরপর টিনের বা কাঠের পিঁড়িতে পামওয়েল তেল মাখিয়ে কাপড়ের সাহায্যে জিলাপি তৈরির মতো বড়ি করে সাজিয়ে শুকাতে দেয়া হয়। ৩-৪ দিন কড়া রোদে শুকালে প্রস্তুত হয় সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি। এ কাজগুলো নারীরাই করেন।
কুমড়ার বড়ি বিক্রেতা মজনু মিয়া বলেন, ‘আকারভেদে প্রতিটি পাকা চালকুমড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকা দরে কিনতে হয়। খেসারি ডাল ৮৫-৯০ টাকা, অ্যাংকর ৪০ এবং মাসকলাই ১২০ টাকা দরে কিনতে হয়। প্রতি কেজি ডাল থেকে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম বড়ি তৈরি হয়। বাজারে ডালভেদে ৬০-১৫০ টাকা কেজি দরে কুমড়ার বড়ি বিক্রি হয়। অ্যাংকর ও মাসকলাই ডালের বড়ির চাহিদা একটু বেশি। খুচরা বাজারে ডালের বড়ির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়।’
তারা আরো বলেন, শাহজাদপুরের উৎপাদিত কুমড়ার বড়ি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহর হয়ে এখন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারগুলোতে স্থান করে নিয়েছে। এদিকে আত্মীয়-স্বজনদের হাত ঘুরে কুমড়া বড়ি এখন প্রবাসী বাঙালিদেরও রসনা তৃপ্ত করছে। এ অঞ্চলের মানুষ যারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছেন তাদের জন্য পাঠানো হচ্ছে এই বড়ি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাত ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচিতি পাচ্ছে এ সুস্বাদু তরকারি।
অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ জীবিকা নির্বাহ করেন এই বড়ির ওপর ভিত্তি করে। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের নয়ন খাতুন (৪২), আঞ্জুয়ারা (৩২), মনজুয়ারা (৩৭), মজনু মিয়া (৩৮)সহ অর্ধশতাধিক পরিবার এই কুমড়ার বড়ি তৈরি ও বিক্রি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে।
স্থানীয়রা জানান, বড়ি তৈরিতে চাল কুমড়ার সঙ্গে ডালের যেমন নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তেমনি রান্নার সময় কুমড়ার বড়ির সঙ্গে মিঠাপানির মাছ থাকলে তা অনন্য হয়ে ওঠে। এই কুমড়ার বড়ি যে কোনো ঝোলের মাছের তরকারি হিসেবে ব্যবহার হয়। দেশি প্রজাতির কৈ, মাগুর, শিং, শৈল, আইড়, গজারসহ মাছের তরকারি রান্নায় স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে ব্যবহার করা হয় এই কুমড়ার বড়ি। অনেকে নিরামিষ তৈরিতে ডাল মেশানো কুমড়া বড়ি ব্যবহার করে থাকেন।
স্থানীয়রা বলেন, ডাল ও মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় কুমড়া বড়ি তৈরিতে খরচ বেশি পড়ছে। ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব?্যবসায়ীদের। তাই স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি করেন তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়