দেয়াল চাপায় শিশুর মৃত্যু : কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিস

আগের সংবাদ

বিজয়ী বিদ্রোহীদের ভাগ্যে কী আছে : সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা সাময়িক বহিষ্কার > ১৯ নভেম্বর আ.লীগের সভায় আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

গুরুদাসপুরের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় : শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম ঢাকতে আদালতে মামলা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনসহ তার সহোদর ও বাড়ির কাজের লোককে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যেই তিনি দুর্নীতি ঢাকতে আদালতের বিরুদ্ধে ছোট ভাইকে দিয়ে মামলা ঠুকে দিয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির পাশাপাশি নিজের ভুয়া অভিজ্ঞতা ঢাকতেই ওই মামলা দায়ের করেছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী জানান, ওই প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের সময় কাম্যযোগ্যতা ছিল না। দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ বিজ্ঞাপনে কাম্যযোগ্যতা চাওয়া হয় স্নাতকোত্তর, বিএডসহ ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। অথচ ওই সময় তার যোগ্যতা ছিল ৮ বছর ৮ মাস ৬ দিন। তার কাম্যযোগ্যতা না থাকায় তথ্য গোপন করে বিধিবহির্ভূত তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন। পরবর্তীতে তার সহোদরকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এবং বাড়ির কাজের লোক রফিকুল ইসলামকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষক তার সহোদরকে জাল সনদে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট ২০১৪ সালে সনদ জালিয়াতির অভিযোগে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি তার ভাই সাইদুরকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ থেকে বরখাস্ত করেন। সাইদুর রহমান বরখাস্ত হওয়ার পর তাকে নতুন করে পুনরায় ২০০৪ সালে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) পদে নিয়োগ দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিও চেয়ে আবেদন করেন। অথচ ওই পদ শূন্য হয় ২০১৫ সালে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় একটি দৈনিকে ১৬ জনের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক সহকারী শিক্ষক বাংলা পদে নিয়োগ পান মো. ইছার উদ্দীন। তিনি ১ নভেম্বর ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ফলে বাংলার শিক্ষক পদটি শূন্য হয়। সেই সুযোগে প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দীন শূন্য পদের তালিকা এনটিআরসিতে না পাঠিয়ে তথ্য গোপন করে একই পদে ব্যাকডেট দিয়ে ২০০৪ সাল থেকে তার ভাই নিবন্ধনহীন সাইদুর রহমানকে নিয়োগ দেখান। এসব অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়াদি উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষে কয়েকজন লোক এবং বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তসহ উপ-পরিচালক মাধ্যমিক শিক্ষা রাজশাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর পরিপেক্ষিতে উপপরিচালক মাধ্যমিক শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চল ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে তদন্ত কার্যক্রমে নিয়োগ সংক্রান্ত নথিসহ স্বপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষক তদন্তে জালিয়াতি ধরা পড়ার আশঙ্কায় তার ছোট ভাইকে দিয়ে সহকারী জজ আদালত নাটোর ২৬৩/২০২১ মূলে প্রশাসনিক তদন্তে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করান। আদালতকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই নকল নিয়োগপত্র, ফটোস্ট্যাট করে সম্পাদিত রেজুলেশন ও ভুয়া পেপার কাটিং দাখিল করে প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতি ও দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা করেন।
প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দীন বলেন, আমার চাকরি জীবনে ছোটখাটো ভুলত্রæটি ছাড়া কোনো জালিয়াতি বা দুর্নীতি করিনি। এক শ্রেণির মানুষ আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই পিছু লেগেছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বাড়ির কাজের লোক রফিকুলকে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ের অর্থে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন।
এলাকাবাসী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম বের করতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানান। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এয়াহুদুজ্জামান বলেন, খোঁজ নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়