চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইদানীং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এ দেশের অতিপরিচিত এক রূপ। করোনা মহামারি আসার পর পুরো বিশ্বেই স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, তবে এই হার যেন বাংলাদেশে আকাশচুম্বী। দেড় বছর করোনার ধকল সামলে ওঠার আগেই নতুন করে বিপাকে পড়ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের সাধারণ পেশার মানুষ। কয়েক মাস ধরেই ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। বর্তমানে এমন কোনো পণ্য পাওয়া যাবে না, যার দাম বৃদ্ধি পায়নি। সাধারণের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বলাবাহুল্য, এখন বেশির ভাগ দ্রব্যের মূল্য ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। নিম্ন আয়ের মানুষ যা উপার্জন করছে তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে অবশিষ্ট থাকছে না। মনে হয়, নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে মারার আরেক নাম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
এদিকে বিআইডিএসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনায় বাংলাদেশে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে, আগের হিসাব যোগ করে গরিব মানুষের এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটির বেশি। হুঁশিয়ারি দিয়েছে মহামারি বাস্তবতার শিকার হয়ে ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা।
আমাদের দেশে পণ্যের আকস্মিক ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বহু কারণ রয়েছে। যেমন চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতা; মুনাফালোভী মজুতদাররা অধিক মুনাফা লাভের আশায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়; ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবেও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়; জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উৎপাদন ঘাটতি; চোরাচালানি; অতিরিক্ত কর বৃদ্ধি; কালো টাকার দৌরাত্ম্য; চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি; সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বণ্টনের অব্যবস্থা ইত্যাদি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এক মাসে প্রায় ১৯.৬৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। জুনে গত অর্থবছরের একটি তালিকা প্রকাশ করে ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। নিত্যপ্রয়োজনীয় ২২টি পণ্য, ১১৪টি খাদ্যদ্রব্য, ১৫টি খুচরামূল্যের দোকান এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ওই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি তালিকাটিতে বলা হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬.৮৮ শতাংশ। গত ৩ বছরের ভেতর এটি সর্বোচ্চ বলেও জানায় সংগঠনটি। বাংলাদেশে অনেক পণ্য রয়েছে যার দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই, তবুও হুড় হুড় করে বেড়েই চলছে। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে। বর্তমানে দেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে ‘বোবা কান্না’। বিশেষ করে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। সামনের দিনগুলোতে এ দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে না ধরলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কান্না শেষ পর্যন্ত ক্ষোভের উদ্গীরণে রূপ নিতে পারে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। দেখা যাচ্ছে না সারাদেশে কালোবাজারি ঠেকানোর কার্যক্রম। অপ্রত্যাশিত এমন মূল্য বৃদ্ধি এ দেশে নতুন নয়। প্রতিদিন সকালে বাজারে ঢুকেই এ দেশের মানুষ জানতে পারে মূল্য বৃদ্ধির খবর। অথচ বিশ্বের যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে জনগণকে জানিয়ে এমনটি ঘটলে জনগণ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ফলে জনসাধারণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। আর বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যেন সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর পেছনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়ানোর মতো খারাপ কাজটি করছে। আন্ডারগ্রাউন্ডে বসে থাকা এই শ্রেণির সবাই দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। নীতিজ্ঞানহীন বিবেকশূন্য এক সম্প্রদায় এসব সমস্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর। তারা কখনো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, কখনো বা চোরাকারবারের মাধ্যমে সেই কৃত্রিম সংকটের শূন্যতা পূর্ণ করছে।
পাশাপাশি জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কেননা, গড়পড়তা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য একটি বাজার ব্যবস্থা যে কোনো দেশের সরকারের কাছে তার জনগণের প্রাণের দাবি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের সুদৃষ্টি অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। অন্তত চারটি ডাল-ভাত খেয়ে দুধে ভাতে বাঁচতে দিন নিম্ন আয়ের মানুষকে।

মো. তোফাজ্জল হোসেন : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়