করোনা মহামারি প্রত্যেকটি মানুষের জীবন কেটেছে রোলার কোস্টারের মতো। যার প্রভাব ফেলেছে মানুষের জীবন ও মনের ওপর। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মানসিক জটিল সমস্যার। ঘরবন্দি এই জীবনে অনেক নারীই মুড সুইং সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক সময়ই দেখা যায় নারীরা নিজের যতœ নিতে ভুলে যান। কারণ আমাদের কাঁধে হাজারো দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বিষয় ভুলে যাই। এই মন ভালো, তো এই খারাপ। এমন মন বদল বা মুড সুইং আমাদের প্রায় সবারই হয়ে থাকে। একটু আগেই সব ঠিক ছিল এখন পুরো সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে। ঘণ্টা দুয়েক পর আবার সব ঠিক। এই যে এত দ্রুত মেজাজ বদলে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে থাকছে না নিজের মন, এই আপদের নাম হলো ‘মুড সুইং’। আপনি যদি মুড সুইংয়ের সমস্যায় ভোগেন তাহলে এ থেকে সহজেই হতাশা ও সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারেও ভুগতে পারেন।
আমাদের দেশের নারীরা মুড সুইংয়ে ভুগছে বেশি মাত্রায়, নারীদের কেন খুব বেশি মুড সুইং হয়? আর পরিবর্তিত শারীরিক অবস্থাই বা কেন মুড সুইং ঘটাতে ভূমিকা রাখে! ভূমিকা যে কেন রাখে, তার যথাযথ নির্ণয় সম্ভব হয়নি। তবে সাধারণত মুড সুইং নারীদের শরীরে হরমোনের তারতম্য দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। মাসিকের আগে এবং মাসিক চলাকালীন একজন নারী ভীষণ রকম মুড সুইংয়ে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম কিংবা পিএমএস, এই জিনিসটি নারীদের মুড সুইংয়ে বড় ভূমিকা রাখে। আর মাসিক চলাকালীন সময়টাজুড়েই একজন নারী মেজাজের এই জটিল চড়াই-উতরাই পার করতে পারেন। এই সময়ে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন শরীরে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, মুড সুইং ঘটার সেটি বড় একটি কারণ। তাছাড়া স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় খানিকটা হলেও ছেদ পড়ে এই সময়, যা সব নারী সহজে মেনে নিতে পারেন না। তখন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, চট করেই বিরক্তি পেয়ে বসে এবং কখনো প্রবল দুঃখবোধ হতে থাকে। মুড সুইংয়ে ভোগা মেয়েগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রাণী। তাদেরকে ন্যাকা, এইমলেস বলে রূঢ় আচরণ না করে বরং এমন একজন হোন যার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদা যায়। যার কাছে মন খুলে কিছু কথা বলা যায়। তবে স্বস্তির কথা হলো মেডিটেশন, নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা এবং রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন, এসব মাসিকের সময়কালীন মুড সুইং কিছুটা সহজে এড়াতে সাহায্য করে। সাধারণ কিছু পিএমএস লক্ষণ হলো- খিটখিটে ভাব, রাগ, বিষণ্নতা, কান্না, অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা, উদ্বিগ্ন ভাব, পর্যায়ক্রমিক বিষাদ ও রাগ।
ভেদাভেদ নেই নারী-পুরুষে তবে ভাবা যাবে না যে, এই সমস্যা পুরোপুরিই নারীকেন্দ্রিক! ছাড় নেই পুরুষদেরও। মনের আবার নারী-পুরুষ ভেদাভেদ আছে নাকি যে, মনের অসুখ নারীতে আর পুরুষে ভিন্ন হবে! মুড সুইং হতে পারে যে কোনো মানুষেরই, এটি জীবনের খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সমস্যা দেখা দিলেই সচেতন হওয়া চাই যেহেতু মুড সুইং নামের এই আপদ পেয়ে বসতে পারে যে কাউকেই, তাই সচেতনতার দায়িত্ব কেবল নারীদের নয়, সবারই। আপনি খোশমেজাজের একজন নিপাট ভদ্রলোক, জীবনে মন খারাপ খুব কমই হয়, মেজাজ আপনার ভীষণ রকম নিয়ন্ত্রণে, সেই আপনাকেও কাবু করে দিতে পারে মুড সুইং। কাজেই সাবধান হতে শুরু করুন গুরুতর লক্ষণ নিজের ভেতর টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই! হেলাফেলায় মনের ভেতর বড় অসুখ যেন বাসা না বানিয়ে বসে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে কিনা এখনো মনের অসুখ নিয়ে মাথা ঘামানোটা আদিখ্যেতার সমান, সেখানে মুড সুইংয়ের ব্যাপারে সচেতনতাও ব্যাপক আকারে দেখা যাবে না। তবুও আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকেই চেষ্টা করে যেতে পারি একটু যাতে অবস্থা পাল্টায়। শরীরের রোগের পাশাপাশি মনের দিকটাও খেয়ালে আসুক মানুষের। মন তো ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ, ভালো-মন্দ মনেরও থাকে, অসুখ তারও হয়, বরং শরীরের চেয়েও নাজুক রকম অসুখ হতে পারে আমাদের মনের। তাই খানিক যতœ করি না কেন আমরা নিজেদের মনের, ক্ষতি তো নেই।
শানজানা রহমান : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]ড়স
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।