চকবাজারে প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন

আগের সংবাদ

তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফ্রিল্যান্সার দেশ

পরের সংবাদ

স্মার্টকার্ড নিয়ে আনস্মার্টকাণ্ড!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ভোগান্তিতে কয়েক কোটি গ্রাহক ** ১১ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ৫ কোটির হাতে স্মার্টকার্ড **
এন রায় রাজা : বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটারের তথ্য আছে। কিন্তু স্মার্টকার্ড পেয়েছেন মাত্র পাঁচ কোটির কাছাকাছি ভোটার। বাকিরা লেমিনেটেডে এনআইডি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ব্লাঙ্ক কার্ডের স্বল্পতা, তথ্যের ঘাটতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে কার্ড ছাপানোর কাজে বিলম্ব হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কোটি কোটি গ্রাহক।
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেয়ার চুক্তি হয়। ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের সঙ্গে ফ্রান্সের অর্বাথ্রুর চুক্তি হয়। সেখানে ১৮ মাসের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল কোম্পানিটির। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও তারা কার্ড দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে ফ্রান্সের অর্বাথ্রু কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় ইসি, মামলাও হয়। এদিকে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পরে সরকারি অর্থায়নে নিজেরাই স্মার্টকার্ড তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়, যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ পর্যন্ত পাঁচবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো শেষে ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্টকার্ড বিতরণে যেভাবে সময় নেয়া হচ্ছে, তাতে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের কার্ড সরবরাহ করতেই লেগে যাবে আরো ছয় বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের আগে তারা কার্ড পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ভোটারদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ কার্ড তথ্যগত সমস্যার কারণে প্রিন্ট হয়নি, যা ‘নট ফাউন্ড ডাটা’ নামে পরিচিত। আবার ২০১৯ সালের ভোটারদের সরাসরি স্মার্টকার্ড দেয়া হচ্ছে। ফলে কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে ভোটারদের মাঝে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার ভোটাররা অনেকেই স্মার্টকার্ড পেলেও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ভোটারদের স্মার্টকার্ড পেতে ভোগান্তি হচ্ছে। অনেক সময় এনআইডি উয়ং কার্ড পাঠালেও সংশ্লিষ্ট উপজেলায় তা পৌছাই নি বা তারা কার্ড খুঁজে পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ করেছেন

ভুক্তভোগীরা।
আইডিয়া-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের বলেন, আমাদের ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড দেবার জন্য অর্বাথ্রুর সঙ্গে চুক্তি হয়। তারা প্রথমে ৫ কোটি স্মার্ট কার্ড দেয়। পরে আরো ২ কোটি ব্লাঙ্ক কার্ড দেয়, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি কার্ড তারা আমাদের দিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২ কোটি ফাঁকা কার্ড। অর্বাথ্রুর কাছে চুক্তি মোতাবেক আরো প্রায় ২ কোটি কার্ড আমরা পাবো। তবে অবাথ্রুর কাছে আমরা যে ২ কোটির মত কার্ড পাবো তার জন্য ওরা সব মিলিয়ে ৫২ মিলিয়ন ইউএস ডলার চেয়েছিল। এটা আমরা আলোচনা করে করে ২৬ মিলিয়ন ডলারে কমিয়ে এনেছি। এ অর্থ দিলে ডিসেম্বরের মধ্যে ওরা বাকি কার্ড পাঠিয়ে দেবে বলে জানান আইডিয়া-২ প্রকল্প পরিচালক। এতে ২৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এর ফলে ইসির হাতে ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড এসে যাবে। তবে চলতি বছরের মধ্যে ৮ কোটি কার্ড পারসোনালাইজেশন করে মাঠে বিতরন করা হবে।
পিডি বলেন, বর্তমানে ১১ কোটি ১৯ লাখ ভোটার রয়েছে। কিন্তু সরকার আমাদের প্রতি বছর ৬০ লাখ করে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছে। সে হিসেবে বাকি ৩ কোটি ভোটারের জন্য ৫ বছরের মধ্যে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করবো আমরা। তবে প্রত্যেককে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের বলেন, অর্বাথ্রু বাদেও ইসির বাকি দু’কোটি কার্ড দরকার হবে। এ জন্য আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিএমটিএ’র কাছ থেকে কেনার ব্যবস্থা করছি। এতে অনেক টাকা কম খরচ হবে বলেও জানান তিনি। পিডি জানান, তিন কোটি কার্ড কেনা থেকে সরবরাহ করা পর্যন্ত ৪৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এদিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর ভোরের কাগজকে জানান, স্মার্টকার্ড নতুন করে তো তৈরি হচ্ছে না। অর্বাথ্রুর কাছ থেকে যে সাত কোটি ৭৩ লাখ কার্ড পাওয়া গিয়েছিল, তার মধ্যে ফাঁকা কার্ড ছিল প্রায় এক কোটি ৭৩ লাখ। এগুলো আমরা নিজস্ব জনবল দিয়ে তথ্য ভরে স্মার্টকার্ড বিতরণ করছি। তবে অর্বাথ্রুর বাকি এক কোটি ৩০ লাখের মতো কার্ড এখনো সরবরাহ না করায় তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে, মামলাও হয়েছে। তারা কিছু অর্থ পাবে, তা দাবি করেছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে বিষয়টি কতদূর, কী অবস্থায় রয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।
এদিকে, গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
গত ২০২০ সালে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইডিইএ প্রকল্পের মূল কাজ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও নাগরিকদের কাছে বিতরণ করা, যা এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। কার্ড তৈরির জন্য চুক্তিবদ্ধ ফরাসি ঠিকাদার কোম্পানি অর্বাথ্রুর টেকনোলজিস চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে কাজ সম্পাদন করতে না পারায় বিশ্বব্যাংকের সম্মতি ও নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এরপরও তারা ৯ কোটি কার্ড সঠিক সময়ে তৈরি ও বিতরণ করতে পারেনি। সময়মতো কাজে ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। আবার যেসব স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে তাতে তথ্যের প্রচুর ভুল ও মান নিয়েও প্রশ্ন তোলে আইএমইডি।
এদিকে ইসি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ছয় কোটি ১০ লাখ কার্ড পার্সোনালাইজ করা হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের কাছে বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি সাত লাখ ৯০ হাজার কার্ড। আর পাঁচ কোটি ৪০ লাখ কার্ড এখনো প্রস্তুত করা হয়নি, যা মোট ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডারে রক্ষিত মেশিনে তথ্য পূরণের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে ইসি।
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন ভোটারের তথ্য আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ আরো প্রায় চার কোটির মতো ভোটার যুক্ত হবে। সেই সঙ্গে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সিদেরও স্মার্টকার্ড দেবে ইসি। সেই হিসেবে এ সময়ের মধ্যে আরো প্রায় ১০ কোটির মতো স্মার্টকার্ড তৈরি ও বিতরণ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়