এএসপি আনিসুল হত্যা মামলার আসামির মৃত্যু

আগের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

পরের সংবাদ

ট্রাফালগার স্কয়ার

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মহান একাত্তরের ১ আগস্ট। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ার। স্কয়ারের সামনের দেয়ালে টানানো হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রসহ লাল-সবুজের পতাকা। যার দুই পাশেই রয়েছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের পুরোধা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি বড় ছবি। ফাঁসির দণ্ডাদেশ নিয়ে তিনি তখন বন্দি পাকিস্তানের কারাগারে। সামনে আরেকটি ব্যানারে লেখা- ‘স্টপ জেনোসাইড, রিকগনাইজ বাংলাদেশ’। বিকাল ৩টার দিকে মঞ্চে উপস্থিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও পূর্ব বাংলা হাইকোর্টের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি)। এর আগে দুপুর থেকেই সেখানে ভিড় জমান হাজারো প্রবাসী বাঙালি। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠন এবং যুদ্ধরত বাঙালিদের জন্য তহবিল সংগ্রহ কীভাবে আরো জোরদার করা যায়। তথ্য মতে, ট্রাফালগার স্কয়ারের ওই সমাবেশে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার বাঙালি। এভাবে বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে যুক্তরাজ্যের ট্রাফালগার স্কয়ার হয়ে ওঠে বাঙালির মুক্তি অর্জনের মুক্তমঞ্চ।
৫০ বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই নয়; মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ট্রাফালগার স্কয়ার শতবর্ষী আন্দোলন মঞ্চ। রাজনৈতিক সমাবেশ, বিক্ষোভ, সামাজিক মিলনমেলা, নববর্ষ উদযাপনে জনসাধারণের মিলনমেলায় পরিণত হয় ট্রাফালগার স্কয়ার।
সেন্ট্রাল লন্ডনে অবস্থিত পর্যটক আকর্ষণীয় এ স্থানটির পূর্ব নাম ‘চেরিং ক্রস’। এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে নেলসন কলাম, যার চারপাশে চারটি সিংহ ভাস্কর্য। এছাড়া এখানে অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।
কিং উইলিয়াম দ্য ফোর্থস স্কয়ার থেকে ট্রাফালগার স্কয়ার : এ চত্বরের প্রকৃত নাম ছিল কিং উইলিয়াম দ্য ফোর্থস স্কয়ার। ১৮০৫ সালে সংঘটিত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিখ্যাত ট্রাফালগারের যুদ্ধে বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে এ নামকরণ করা হয়। জর্জ ল্যাডওয়েল টেলর ট্রাফালগার স্কয়ার নাম পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেন। ১৮২০ সালে ৪র্থ জর্জ স্থপতি জন ন্যাশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ চত্বরের মান উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। ন্যাশ তার চেরিং ক্রস ইম্প্রুভমেন্ট স্কিমের আওতাধীনে চত্বর পরিষ্কার করণে অগ্রসর হন। স্কয়ারের বর্তমান অবকাঠামোটি ১৮৪৫ সালে স্যার চার্লস ব্যারী কর্তৃক পূর্ণাঙ্গতা পায়। রাজমুকুটধারী রাণীর নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে এটি চিহ্নিত হয়ে আছে। গ্রেটার লন্ডন অথরিটি কর্তৃক এটি পরিচালিত হয়। এছাড়া ওয়েস্টমিনিস্টার সিটি কাউন্সিল কর্তৃক স্কয়ারের চারপাশের রাস্তা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ফোয়ারা : ১৮৪০-এর দশকে স্থাপিত স্কয়ারটি তৈরির সময় ফোয়ারা ব্যবহারের উদ্দেশ্য ও সৌন্দর্যের বিষয়টি তেমন স্পষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে জায়গার স্বল্পতা এবং বিক্ষোভপূর্ণ সমাবেশের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তোলে। ন্যাশনাল গ্যালারির পেছনে আর্টেজিয় কূপ খনন করে স্টিম ইঞ্জিনের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৩০-এর দশকের শেষদিকে এর পরিবর্তে পাথরের জলপূর্ণ গর্ত এবং পাম্প বসানো হয়। নতুন ফোয়ারা নির্মাণের জন্য স্যার এডউইন লাতইয়েন্সের নকশা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পশ্চিম দিকে লর্ড জেলিকো এবং পূর্ব দিকে লর্ড বিটি’র স্মৃতিরক্ষার্থে ফোয়ারাগুলোর নামকরণ করা রয়েছে।
প্রতিবাদে সমাবেশে ট্রাফালগার স্কয়ার : স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের পরপরই ট্রাফালগার স্কয়ার রাজনৈতিক সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। ১৮৩৯ সালের মার্চ মাসে নেলসন কলাম উন্মুক্ত হলে এ চত্বরে সংস্কারবাদী আন্দোলন বা চার্টিজম সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮৮০ সাল পর্যন্ত সব ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর সাধারণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে পুনরায় রাজনৈতিক সমাবেশের সূচনা ঘটে। ১৮৮৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্ল্যাক মানডে বিক্ষুব্ধ জনতা বেকারত্বের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে। এর ফলে পল মল এলাকায় ব্যাপক দাঙ্গা বাধে। পরের বছর ১৮৮৭ সালের ১৩ নভেম্বর ব্লাডি সানডে খ্যাত ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামার সূত্রপাত এ স্কয়ারেই হয়। ১৯৬০ সালে বার্ট্রান্ড রাসেল, রাল্ফ স্যোনম্যান, রেভারেন্ড মাইকেল স্কট প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ যুদ্ধবিরোধী গ্রুপ কমিটি অব হান্ড্রেডের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা শান্তির স্বপক্ষে এবং যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিপক্ষে সেøাগান দেন। সাউথ আফ্রিকা হাউজের বাইরে আশির দশকে ধারাবাহিকভাবে জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে পোল ট্যাক্স রায়ট এবং আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ট্রাফালগার স্কয়ার অবরুদ্ধ ছিল। ২০০৫

সালে ৭ জুলাই লন্ডনে সন্ত্রাসী বোমা হামলার পরই ব্যাপক প্রতিবাদ সমাবেশ ঘটে। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তনের রূপরেখা সংক্রান্ত সম্মেলন চলাকালীন ক্যাম্প ফর ক্লাইমেট একশনের কর্মীরা দুই সপ্তাহের জন্য স্কয়ার দখল করে রেখেছিল।
২০১১ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাজ্যে বাজেট প্রণয়ন ও বাজেট কাটছাটের প্রেক্ষাপটে স্কয়ারটি বিক্ষোভকারীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। দাঙ্গা পুলিশ এবং প্রতিবাদকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় স্কয়ারের অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্রীড়াপ্রেমীদের মিলনমেলা : ১৯৯৬ সালের ২৬ জুন ইউরো প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের কাছে সেমিফাইনালে জার্মানি পরাজিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে স্কয়ারে ব্যাপক দাঙ্গা বাধে ও অনেকেই আহত হন। ২০০২ সালের ২১ জুন বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রায় ১২ হাজার দর্শক জমায়েত হয়ে ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলা টেলিভিশনের বড় পর্দায় উপভোগ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়