ভ্রমণ ভিসায় ৫০০ জনকে দুবাই পাচার, গ্রেপ্তার ৮

আগের সংবাদ

কপ-২৬ : জলবায়ু বিপর্যয় রোধ > গরিব দেশগুলোকে ২৯ কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

পরের সংবাদ

ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** বাস ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ, আজ থেকে কার্যকর ** বিশেষজ্ঞদের মতে, জনদুর্ভোগ বাড়বে **
কাগজ প্রতিবেদক : ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও বাস মালিকদের বৈঠকে এই প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকের পর প্রস্তাবটি সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার থেকে এই প্রস্তাব কার্যকর হবে। গতকাল রবিবার ভাড়া পুনঃর্নিধারণসংক্রান্ত কমিটির সাড়ে ৫ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এ তথ্য জানান। এই সিদ্ধান্তের পর মালিকরা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে।
তবে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিআরটিএ এর দেয়া প্রস্তাব কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, বিআরটিএ কার্যত বাস মালিকদের সুবিধার বিষয়টিই সভার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। এভাবে বাস ভাড়া বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। অবশ্য বাস মালিকরা ভাড়া ৪০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন।
বিআরটিএ কার্যালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মহানগরী এলাকায় বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা এবং মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকেই এই ভাড়া কার্যকর করা হবে। প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব এবং এরপর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তিনি বলেন, ভাড়ার এই নতুন হার শুধু ডিজেল চালিত বাসের জন্য প্রযোজ্য হবে। সিএনজি চালিত বাসের ভাড়া এক পয়সাও বাড়ানো যাবে না। নতুন ভাড়া তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়, তারা আগের হারে ভাড়া নেবে।
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ানো একেবারেই যৌক্তিক ছিল না। তারপর আবার বাসের ভাড়া

বাড়ানোর বিষয়টিও একেবারেই যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি না। অস্বাভাবিকভাবে দাম ও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে জনজীবনে সংকট বাড়বে, মানুষের কষ্ট বাড়বে। সরকার ব্যবসা করুক আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। তেলের দাম বাড়ানো এবং বাস ভাড়া বাড়ানোকে সরকার ব্যবসা বিবেচনায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এটা ঠিক হয়নি। জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস মালিকরা ধর্মঘট করছে। ভাড়া বাড়ানোয় আমরা খুশি। লোকসান দিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়। আমি বাসের মালিকদের অনুরোধ করব, ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন। দেশ যেন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সোমবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমাদের নজরদারি থাকবে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ রাত থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা হবে। সব জেলা থেকে বাস চলাচল শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হকও। তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা কোনো পেশাদারি কাজ হলো না। সমস্যা তৈরি করে সমাধান দিচ্ছি; কিন্তু তাও আবার পুরোপুরি সমাধান নয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক। জনভোগান্তি দূর করার বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। প্রশাসনিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেত। পরিবহন খাত একটা বিশৃঙ্খল জায়গা। সরকারকে এটা পেশাদারিত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করলে হবে না। করোনার পরপরই জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরো বুঝে শুনে এগুনোর দরকার ছিল। কারণ তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের ওপর পড়ে।
সড়ক যোগাযোগ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের’ নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, বিআরটিএ এর দেয়া ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব মোটেই যৌক্তিক হয়নি। তারা জনগণের পক্ষে কাজ করেনি। তারা কৌশলে বাস মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জনগণের বিরুদ্ধে দুর্বৃতায়নের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর কথা বলা হলেও দেখা যাবে বাস মালিক-শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ হারে ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করবে। বাস ভাড়া বড়ানোর ফলে মানুষের জীবনে সব ক্ষেত্রে ভোগান্তি চরমভাবে বাড়বে। তেলের দাম বাড়ানোর পর বড় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিআরটিএর জনগণের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু তারাও কৌশলে বাস মালিকদের পক্ষে কাজ করেছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে অশান্তি বাড়বে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো এবং পরিবহন ধর্মঘটের পর আমরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তেলের দাম প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু এরই মধ্যে বিআরটিএ বাসের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে। তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানো অযৌক্তিক।
এর আগে গতকালের বৈঠকে পরিবহন মালিকরা মহানগরে বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা এবং মিনিবাসে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করার প্রস্তাব করেন। আর দূরপাল্লার বাস ভাড়া ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা করার দাবি তোলেন।
উল্লেখ্য, সবশেষ ২০১৫ সালে নগর পরিবহনে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। আর ২০১৬ সালে দূরপাল্লায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়