প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার মহানায়ককে স্বাধীন দেশের মাটিতে বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কিছু সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। যে মানুষটি আজীবন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য সংগ্রাম করেছে বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথ এবং কারাগারে কাটিয়েছে জীবন যৌবনের অধিকাংশ সময়। যে মানুষটি বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সে মানুষটিকে হারাতে হলো ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে কলঙ্কিত করা হলো বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে।
কলঙ্কিত করা হলো শহীদদের রক্তভেজা বাংলার মাটিকে।
শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেই ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকেনি তাদের পরবর্তী মিশন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা। সে মিশনের জন্য ১৫ আগস্টের নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরপরই ২৩ আগস্ট বন্দি করা হয় বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা জাতির চার শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া এবং প্রবাসী সরকারের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে কয়েকজন সেনা সদস্য কারাগারে ঢুকে বন্দি চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বীরদর্পে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়। কী নির্মম নৃশংসতা! কী পাশবিক হিংস্রতা! অমানবিকতার কী নারকীয় দৃষ্টান্ত! উচ্চবিলাসিতার কী পরিমাণ মোহ এবং ক্ষমতার প্রতি কী পরিমাণ লোভ জাগলে মানুষ রক্তপিপাসু হয়ে উঠে তার চিত্রায়ন দেখল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্ববাসী। কারাগার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের জায়গা। সে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্বরোচিত এ হামলা গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিল।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম নৃশংস হত্যার পর আরেকটা বেদনাবিধুর নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করে দিল। এ হত্যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কলঙ্ক তিলক পরাল ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার ললাটে। ৩ নভেম্বর চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয় বলে এ দিনটিকে জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার প্রতি মোহ, লোভ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়া। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দেয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। চেইন অব কমান্ড ভেঙে যায়। দুটি পক্ষে বিভক্ত হয় সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার লোভে পড়ে যায় কোনো কোনো সেনা কর্মকর্তা। তাদের কারো কারো ধারণা এ চার নেতা যদি জীবিত থাকে তবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
তাই জাতির জনকের স্বপ্ন এবং আদর্শকে চিরতরে কবর দেয়ার জন্য চার নেতাকে হত্যা করে বাঙালিকে এতিম করে দিতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু তারা হয়তো ভাবতে পারেনি সূর্যকে মেঘ ক্ষণিকের জন্য ঢেকে রাখলেও মেঘ কেটে গেলে যেমন করে সতেজে আবার উদিত হয়ে আলোকিত করে তোলে জগৎকে, ঠিক তেমনি সত্যকে কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না, সময় হলে মিথ্যার খোলস ভেঙে সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। অপরাধ কখনো গোপন থাকে না, একদিন না একদিন প্রকাশ হবেই। অপরাধীর শাস্তি হবেই। আজ অথবা কাল। সময়ের প্রতীক্ষা মাত্র। সেটাই প্রমাণ হয়েছে। বাংলার মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীকে বুলেটবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল কিন্তু তার অহিংসার বাণীকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বাংলার প্রতিটি মানুষ তার আদর্শকে লালন করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে একতাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতির জনকের স্বপ্ন এবং আদর্শ পূরণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তবেই হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।