ডিএমপি কমিশনার : স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ থাকলে মামলা নয়

আগের সংবাদ

ইইউ-চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অঙ্গীকার > ৫০ বছরেই ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ : এক হাজার কোটি ডলার তহবিলের নিশ্চয়তা, উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা

পরের সংবাদ

গøাসগোতে উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় শেখ হাসিনা : সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় নারীর জন্য জায়গা তৈরি করা জরুরি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি, গøাসগো, স্কটল্যান্ড থেকে : নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশ নিতে পারে এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে চলতি কপ সম্মেলন থেকে একটি সাহসী ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নারীদের দুর্বলতাগুলো মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের জন্য জায়গা তৈরি করাটা জরুরি। গতকাল মঙ্গলবার গøাসগোতে ‘উইমেনস ক্লাইমেট লিডারশিপ ইভেন্ট- কপ২৬ : উইমেন এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন- ইউএন আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক সীমা বাহুস, স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন এমএসপি, এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী খাজা কালাস, তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান।
অভিযোজন সমাধানের জন্য বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (এনইপিএ) ব্যাপকভাবে লিঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত নীতি ও কৌশলে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতে আমরা জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ একেবারে তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমান হালনাগাদ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনায় (বিসিসিএসএপি) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যবহারিক ও কর্মমুখী কর্মসূচি গ্রহণের অন্যতম কৌশলগত ক্ষেত্র হিসেবে জেন্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ‘জেন্ডার রেসপন্সসিভ বাজেটিং’ চালুর কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে এটাই সত্য যে, নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি সহিষ্ণু। এমনকি সবচেয়ে কঠিন প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতেও পরিবার ও গৃহের পরিচর্যার জন্য নারীরাই প্রথম বাড়ি ফিরে যায়।
দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশে ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক আছে- যাদের ৫০ শতাংশই নারী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পলিসি তৈরি থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে সবখানে আমরা নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।
দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির মাধ্যমে মৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশ সফল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ৫০ বছর আগে একটি ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেখানে এক বছর আগে সে রকম একটি ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকশ মানুষ মারা গেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বাংলাদেশ ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট বিপদগ্রস্ত দেশ হতে জলবায়ু সহিষ্ণু এবং সেখান থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির পথে যেতে এই পরিকল্পনায় নারীদের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে মানবসমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে নারীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাধারণত সারা বিশ্বে নারীরা সম্পদের সমান অধিকার পায় না। এর বাইরে অনেক সমাজে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে না এবং প্রায়ই তাদের কম বেতনে এমনকি বিনা বেতনে কাজ করতে হয়। এসব বিষয়ের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পুরুষের চাইতে নারীদের ওপর বেশি পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আর্থ-সামাজিক এবং সংস্কৃতিক বিষয়ের কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারী ও কিশোরীরা এর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চাকাক্সক্ষাকে ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত করার এটাই উপযুক্ত সময়। যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েরই অন্তর্ভুক্তি থাকবে। এর জন্য আমাদের অবশ্যই বিভিন্ন জলবায়ুসংক্রান্ত নীতিতে নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যায় নারীদের চাহিদা এবং অগ্রাধিকারগুলোকে মোকাবিলায় নারীদের জন্য অর্থের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য সারা বিশ্বের নারীদের সোচ্চার হওযার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রতিশ্রæতি লঙ্ঘন ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিপদকে ঘনীভূত করছে :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার্বন নিঃসরণকারী গুরুত্বপূর্ণ উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রæত তহবিল না দেয়ায় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র দেশগুলোকে আরো অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি মোকাবিলায় আমাদের নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার কপ-২৬ সম্মেলনের পাশাপাশি ফোরামের সভাপতি হিসেবে ৪৮ জাতি সিভিএফ নেতাদের সংলাপে ভাষণদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক’ আখ্যায়িত করে বলেন, অদ্যাবধি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রæত বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কপ-২৬ এর স্বাগতিক দেশ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও গøাসগো শহরের কপ-২৬ সম্মেলনে ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম লিডার্স ডায়ালগ : ফোর্জিং এ সিভিএফ-কপ-২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি প্যাক্ট’ শীর্ষক সংলাপে ভাষণ দেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাদের জন্যই ৪৮ জাতি সিভিএফ সদস্য দেশগুলোকে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেরাই নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সুযোগ নেয়ার আহ্বান :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের দেয়া অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো (আরো যদি থাকে) খুঁজে বের করব এবং আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, সেগুলোর সমাধান করার মাধ্যমে বিনিয়োগের পরিবেশকে আরো সুবিধাজনক করব।
গতকাল স্কটল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি এখানে তার বাসস্থান থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই গণমুখী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সব সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে। যথাযথ চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধার্থে একটি পৃথক ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা করেছে তার সরকার।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে আমি জানতাম না যে আপনারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। লন্ডনে একটি রোড শো হবে, যেখানে আমি বাংলাদেশ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষকে (বিডা) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।
সরকারপ্রধান আরো বলেন, বিনিয়োগের সুবিধার্থে সব বাধা দূর করতে তিনি ইতোমধ্যে বিডাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বিনিয়োগ বন্ড ও প্রিমিয়াম বন্ড রয়েছে যেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। সরকার যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে সেখানেও প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তার সরকার ঢাকা-নিউইয়র্ক এবং ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য আলোচনা করছে।
এছাড়াও এদিন বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা নাগাদ কপ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাক টু ব্যাক স্কটল্যান্ডের ফাস্ট মিনিস্টারের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর আগে কমনওয়েলথের সংবর্ধনা ও লাঞ্চে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বেলা ১১টায় সিভিএফের সভায় যোগ দেন এবং ১টায় স্কটল্যান্ড সংসদ পরিদর্শন, স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সংসদে ভাষণ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়