বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি : উপজেলার বামনা-বুকাবুনিয়া সড়কের যাদবপুড়া খালে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত দৈর্ঘ্যরে চেয়ে কম দৈর্ঘ্যরে একটি পাইল নির্মাণ করে সেটিকে মাটি দিয়ে ভরাট ও মাটির উপর লোক দেখানো রডের খাঁচা সিমেন্ট লাগিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা গেছে, ইএফটি এন্ড ইটিসিএল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার যাদবপুরা ব্রিজের নির্মাণকাজ করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ব্রিজটির উভয় পাশে ২৪টি পাইল বসালেও একটি পাইল মাটির প্রায় ১০ ফুট গভীরে স্থাপন করে। পরে সেখানে মাটি দিয়ে সেই পাইলটি ঢেকে দেয়। এভাবে একপাশের ১১টি পাইলের স্থানে বেইজ ঢালাই করেন শ্রমিকরা।
পরে মাত্র ২ ফুট লম্বা রড দিয়ে জালি তৈরি করে ওই পাইলের স্থানে স্থাপন করা হয়। এমন ঘটনা এলাকাবাসী দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সেটি সরিয়ে ফেলেন। পরে ঘটনাস্থলে উপজেলা এলজিইডির কার্যসহকারী মো. কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পাইলের স্থানে মাটি খুঁড়ে রড ঝালাই দিয়ে আবারো সেটি মাটির উপরে স্থাপনের নির্দেশ দেন।
সরজমিনে গতকাল নির্মাণাধীন ব্রিজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ ফুট মাটি খুঁড়ে সেই পাইলটি দৃশ্যমান করা হয়েছে। তবে, এখনো তার রডের সঙ্গে নতুন রড ওয়েল্ডিং করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচলের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করেনি। প্রতিদিন বামনা-বুকাবুনিয়া সড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
জানা গেছে, বরগুনার বামনা উপজেলার বামনা-বুকাবুনিয়া সড়কের যাদবপুরা খালে ব্রিজ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেন বরগুনা এলজিইডি দপ্তর। লটারি প্রক্রিয়া শেষে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ইএফটি এন্ড ইটিসিএল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রিপন। গত বছরের শুরুতে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও কোভিড মহামারির কারণে এখনো সম্পূর্ণ হয়নি সবগুলো পাইলের কাজ।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মিটার দীর্ঘ এ ব্রিজ নির্মাণ করতে উভয় প্রান্তে ২৪টি পাইল ২৪ মিটার মাটির গভীরে স্থাপিত হবে। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার সবাই যখন জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে ছিলেন তখন শ্রমিকরা গোপনে পাইলের স্থানে মাটির উপরে একটি রডের খাঁচা তৈরি করে সিমেন্ট দিয়ে জোড়া লাগিয়ে রাখেন। পরে স্থানীয়রা মসজিদ থেকে এসে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করেন এবং নিজেরাই সেই রডের খাঁচাটি সরিয়ে ফেলে গণমাধ্যমকর্ম ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের খবর দেন। যাদবপুরা ব্রিজের
নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের ম্যানেজার মো. হোসেন জানান, ১২টি পাইলের একটি নিচে দেবে গেছে। শ্রমিকরা শারীরিক শ্রম এড়াতে ওই পাইলের স্থানটি না খুঁড়ে বেইজ ঢালাই দিয়েছেন। পরে পাইলের স্থানে একটি খাঁচা তৈরি করে তা লাগিয়ে দিয়েছে। তবে, আমরা বুঝতে পারিনি এটা ধরা পড়ে যাবে।
এ ব্যাপারে বামনা উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার মো. জয়নাল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
তবে, ব্রিজ নির্মাণকাজের তদারক কর্মকর্তা উপজেলা এলজিইডির কার্যসহকারী মো. কামাল হোসেন জানান, মাটির নিচে পাইল আছে। এখানে ঠিকাদার বা এলজিইডির কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নেয়নি। তিনি আরো জানান, মাটি খুঁড়ে পাইল বের করে আবারো রডের সঙ্গে ওয়েলডিং করে পাইলের বাকি অংশজুড়ে দেয়া হবে।
ইএফটি এন্ড ইটিসিএল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে, ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজ করা ঠিকাদার মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন বলেন, আমরা শতভাগ দুর্নীতি মুক্ত থেকে ব্রিজের কাজ শুরু করেছি। একটি পাইল হয়ত দেবে গেছে। আমার শ্রমিকরা সেটি ঠিক করার চেষ্টা করছে।
বামনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্রিজটির একটি পাইল হয়ত নিচে দেবে গেছে। মাটি খুঁড়ে পাইলের সঙ্গে আর একটি পাইলজুড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তবে, কাজটি শ্রমিকদের খামখেয়ালিতে হয়ত হয়েছে। এটা কোনো দুর্নীতির উদ্দেশ্যে করা হয়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।