মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

নারাজি আবেদনের আদেশ ৩ নভেম্বর : মিতু হত্যার পুনঃতদন্ত চান বাবুল আক্তার

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ‘আমার ওপর অবিচার হচ্ছে। এই মামলার আমি বাদী। আমি স্ত্রী হত্যার বিচার চেয়েছি। ঘটনার সময় আমি চট্টগ্রামেও ছিলাম না। পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। মামলার পুনঃতদন্ত দাবি করছি।’
স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের নারাজি আবেদনের শুনানি শেষে ৩ নভেম্বর আদেশের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বুধবার চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহ্?নাজ রহমানের আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাবুল আক্তার। শুনানিতে স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলায় সিআইডি বা অন্যকোনো সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুনঃতদন্ত চেয়েছেন তিনি, যা আদালতকে জানিয়েছেন। শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় স্ত্রী হত্যার আসামি হয়ে এখন কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার।
প্রায় পাঁচ বছর মামলার তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১২ মে

আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। সেদিনই নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা করেন। যাতে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়। বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী গত বুধবার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারাজি বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত ৩ নভেম্বর আদেশের জন্য রেখেছেন। আরেকটি আবেদন আমরা করেছিলাম, এর আগে অ্যাডিশনাল এসপি বা এসপি পর্যায়ের তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ছিলেন। তারা বাবুল আক্তারের সহধর্মিণী মিতুর বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকার নেয়ার পরেও সেটা রেকর্ড করেননি।’
আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘এ মামলায় ৫১ জন সাক্ষীর ১৬১ ধারায় এবং দুজনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাঁচ বছরেও কিছু পাওয়া যায়নি। দুজন লোককে তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচ বছর পরে এনে এই মামলায় বাবুল আক্তারকে সম্পৃক্ত করেছেন। যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। পাঁচ বছর পরে কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য আইনগতভাবে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সিনিয়র অফিসাররা মামলাটা তদন্ত করলেন। পরে জুনিয়র একজন অফিসার তিন মাসের তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেন। অথচ সেটা বাদীকে (বাবুল) নোটিস দিয়ে জানানো হয়নি।’
আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল আক্তার সিআইডি বা অন্যকোনো সংস্থার অ্যাডিশনাল এসপি বা সিনিয়র অফিসার দিয়ে মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়েছেন।’ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মিতু হত্যাকাণ্ডে ‘অস্ত্র সরবরাহকারী’ এহতেশামুল হক ভোলা গত ২৩ অক্টোবর বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হন। পরদিন ২৪ অক্টোবর তিনি মিতুর বাবার করা হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর নিজের করা মামলাটিতে পিবিআইয়ের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাবুল।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই।
আদালতের আদেশে পরে মিতু হত্যা মামলা যায় পিবিআইয়ের হাতে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়। এর পরদিন ১২ মে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যার সঙ্গে তার স্বামী বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা। ঢাকায় ওই সংবাদ সম্মেলনের পর সেদিনই চট্টগ্রামে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন পিবিআইর পরিদর্শক মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা। এরপর ওইদিনই পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। যাতে বাবুলকে প্রধান আসামিসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়। যে মামলায় বাবুল ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তার ‘সোর্স’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা, মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে শাক্কু, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও খায়রুল ইসলাম কালু।
ওই মামলায় বাবুলকে পিবিআই হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়