মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

ঠিকাদার-নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি : চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারে ‘ফাটল নেই’

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নগরীর প্রথম ফ্লাইওভার বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে কোনো ‘ফাটল নেই’ বলে দাবি করেছেন নকশাকারী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন- ‘এটা ফাটল নয়, এটা হলো কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। সাটার একটার উপর আরেকটা বসানোর সময় মাঝখানে ফোম দেয়া হয়। সেই ফোম এখনো মাঝখানে আছে। উপরে উঠে আমরা দেখেছি।’ গতকাল বুধবার সকালে র‌্যাম্পটি পরিদর্শন করেন এর নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা। পরে দুপুরে নগরীর আলমাস মোড় সংলগ্ন এলাকায় ম্যাক্সের কার্যালয়ে তারা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এমন ব্যাখ্যাই দিলেন।
এর আগে গত সোমবার রাতে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই পুলিশ ওই র‌্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ফাটল দেখে র‌্যাম্পের নির্মাণ ত্রæটি অথবা নকশাগত ত্রæটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামের প্রথম নির্মিত এই ফ্লাইওভারে ফাটলের ব্যাপারটি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, তারা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে রয়েছেন। পিলারগুলো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পিলারের ফাটল অতটা ভয়াবহ না। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়। এদিকে চান্দগাঁও থানা ওসি মঈনুর রহমান বলেছেন, ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার কারণে রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এই এলাকায় পোশাক ও শিল্প কারখানা বেশি যার কারণে বড় বড় গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়া আসা করে। কিন্তু এখন ফ্লাইওভার বন্ধ থাকায় নিচ দিয়ে যাওয়ার ফলে উভয় পাশে যানজট লেগেছে।
গত বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ডিজাইনার প্রতিষ্ঠানের দল পরিদর্শন করেছে। তাদের যে পর্যবেক্ষণ তাই বলছি। তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, কলামগুলোতে যে ফাটল দেখতে পাচ্ছি সেটা ওই ফাটল না। এটা কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। কলামের সঙ্গে টেক্সচারের কাস্টিংয়ের যে জয়েন্ট, সেই সাটারিংটা প্রপার পজিশনে ছিল না। কাস্টিং করার সময় ডিসপ্লেস হয়েছিল। যার কারণে একটা স্পেস সৃষ্টি হয়। সাটার টু সাটার জয়েন্টে ফোম ব্যবহার করা হয়। যাতে কোনো ওয়াটার লিকেজ না হয়। সেই ফোমটা আছে। এতদিন হয়ত চোখে পড়েনি। অরিজিনালি এটা কোনো ফাটল না।
র‌্যাম্পের অবকাঠামোগত কোনো ক্ষতি হয়নি দাবি করে মনির হোসেন বলেন, যেহেতু এটা ক্যান্টিলিভার,

১৩ মিটার প্রায়। এটার প্রান্তে কিছু সেটেলমেন্ট হবেই। তাদের পর্যবেক্ষণ এখনো শেষ হয়নি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে লিখিতভাবে চউককে জানাবে। হালকা গাড়ি চলাচল এখনই খুলে দেয়া যেতে পারে। স্ট্রাকচারাল কোনো ফল্ট পায়নি। র‌্যাম্পের কলামের ভেতরে কোনো ফাটল আছে কিনা জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, ফিজিক্যালি চেক করে কিছু পায়নি। আরো নিশ্চিত হবার জন্য যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে ভেতরে কোনো ফাটল আছে কী নেই।
বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য নকশাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিএমের পরিচালক শাহ জাহান আলম সাংবাদিকদের বলেন, উপরে উঠে দেখলাম ওটা ক্র্যাক না, কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। কনক্রিট করার সময় সেটা এক্সপোজ হয়ে যায়। ঢালাইয়ের সময় সাটারটা বের হয়ে আসে। মূল স্ট্রাকচারে কোনো সমস্যা নেই। তবে এই র‌্যাম্পে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ জানিয়ে শাহ জাহান আলম বলেন, হালকা যানের জন্যই এই র‌্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। এটার উপর দিয়ে অনেক বড় গাড়ি চলেছে। শুরুতে ব্যারিকেড ছিল। এখনো সাইনবোর্ডটা আছে বামপাশে। কোনো কারণে তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ভারী যান গিয়েছে। এটা একটা বক্স গার্ডার, এর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কোথাও কোনো ফাটল নেই।
ডিপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম এ সোবহান বলেন, আগেও ভারী যান চলাচলের পরামর্শ দেইনি। এখনো দিচ্ছি না। এটা ভারী যানবাহনের জন্য ডিজাইন করা হয়নি। প্রয়োজনে ভেতরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখব। তারপর সুপারিশ করব যেন হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যায়। ধাপে ধাপে দেখছি। তদন্ত শেষ না হলে এখন কিছু বলতে পারছি না।
প্রায় ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভারটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। চউক ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত র‌্যাম্পটি প্রায় চার বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চউক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়