পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

ভোগান্তিতে নগরবাসী : চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল, যান চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নগরের বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্পের ২টি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ফ্লাইওভারের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণ ত্রæটি নাকি ভারী যানবাহন চলাচল করায় এই ফাটল সৃষ্টি হয়েছে- তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র নির্মাণ ত্রæটিকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে ভারী যান চলাচলের কারণে এই ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটলের কারণে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ফ্লাইওভারে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সিএমপির পক্ষ থেকে ব্যারিকেডের পাশাপাশি সেখানে দুইজন ট্রাফিক সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। ফ্লাইওভারে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুপাশের সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী এ ঘটনার দায় চাপিয়েছেন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর ওপরে। তিনি বলেছেন, নির্মাণ ত্রæটির কারণেই ফাটল দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি তো প্রকৌশলী না। ফাটলের কারণ আমি বলতে পারব না। তবে সাধারণভাবে যেটা বলতে চাই, নিশ্চয়ই নির্মাণে ত্রæটি আছে। যার ফলে এ ফাটল দেখা দিয়েছে। এখানে প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে কি হয়েছে, না হয়েছে এটা আমার থেকে প্রকৌশলীরা ভালো বলতে পারবেন। তারা কারিগরি বিষয় ভালো বলতে পারবেন। ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। এটি আমরা নির্মাণ করিনি, এটা নির্মাণ করেছে সিডিএর অধীনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। ব্যবস্থা নেবে সিডিএ। ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে আজকে আমরা সিডিএকে চিঠি দেব। যেসব ঠিকাদার কাজ করেছে তাদের নির্মাণে কোনো ত্রæটি আছে কিনা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।
অন্যদিকে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ফ্লাইওভারটির প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের নকশার কোনো ত্রæটি নেই। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। ফ্লাইওভারের এ অংশটি (র‌্যাম্পটি) ডিজাইন করা

হয়েছিল হালকা যানবাহনের জন্য। শুরুতে প্রবেশমুখে ভারী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচের সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সে প্রতিবন্ধকতা কে বা কারা খুলে দিয়েছিল। ফলে প্রতিনিয়ত কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করে। এ কারণে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ফাটল দেখা দিলেও তা সংস্কার বা মেরামত করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য কিছুদিন র‌্যাম্পে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তা সংস্কার করা হবে।
চসিক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ২টি কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। একটি নকশাগত ত্রæটি, অন্যটি নির্মাণ ত্রæটি। কী কারণে হয়েছে সেটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে ভারী গাড়ি চলাচলের কারণেও এটা হতে পারে। নির্মাণে যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলেছি। এই র‌্যাম্পটা মূল নকশায় ছিল না। পরবর্তী সময় এটা বর্ধিত করা হয়েছে। এজন্য ডিজাইনের ত্রæটি থাকতে পারে। তিনি বলেন, এখন একটা হাইট ব্যারিয়ার বসিয়ে দেব। যাতে ভারী গাড়ি উপরে উঠতে না পারে। এজন্য সিডিএকে চিঠি দেব। যেহেতু মূল প্রজেক্ট তারা করেছেন। তাদের একটা পরমর্শ তো লাগবে। মূল ডিজাইনের ভিত্তিতে একটা পরামর্শ দেবেন তারা। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করব।
চান্দগাঁও থানার ওসি মইনুর রহমান বলেন, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নতুন চান্দগাঁও আবাসিক অংশে উপরে ও নিচে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অন্য পাশ দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য প্রাথমিকভাবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফ্লাইওভার ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বরতরা এসে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সব কিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হবে। এ এলাকার সড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ পড়ছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে যানজট নিরসন হয় ও জনগণের ভোগান্তি কমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম পর্যায়ে লুপ ও র‌্যাম্প কোনোটি ছাড়াই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ফ্লাইওভারটির কালুরঘাটমুখী একটি লুপ (ফ্লাইওভারের সঙ্গে অন্য সড়কের সংযোগকারী) নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে একটি একমুখী র‌্যাম্পের (গাড়ি ওঠানামার রাস্তা) প্রস্তাব করা হয়। তবে তা না মেনে লুপ ছাড়াই সেটি চালু করা হয় ২০১৩ সালে। এর প্রায় চার বছর পর র‌্যাম্পটি নির্মাণ করা হয় হালকা যানবাহনের জন্য। তাতে ভারী গাড়ি চলাচলের কারণে এখন ফাটল ধরার কথা বললেও এর দায় নিতে রাজি নয় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কিংবা রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, ওই ফ্লাইওভারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় লুপ করার বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও সভায় কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে আর তাদের সম্পৃক্ত রাখা হয়নি। এই রকম র‌্যাম্প ডিজাইনে ছিল না। মূল ডিজাইন মেনে এটা করা হয়নি। এখানে ডানমুখী আরেকটি লুপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এখন শুধু একটি র‌্যাম্প ধরে যদি উভমুখী যানবাহন চলাচল করে তাহলে লোড ট্রান্সফারের (ওজন স্থানান্তর) কারণেও ফাটল হয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, সিডিএ কীভাবে এটা করেছে জানি না। এখনকার ফাটল বড় কিছু নয়। তবে ডিজাইন পরিবর্তন না করে যদি এ কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে ফাটল আরো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ যানজট নিরসনে নগরের শুল্কবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছিল ফ্লাইওভারটিতে। ২০১২ সালের ২৯ জুন একটি গার্ডার হঠাৎ ধসে পড়ে। এরপর একই বছরের ২৪ নভেম্বর ফ্লাইওভারের ৩টি গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ১৪ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। প্রথমে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯১ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে ১০৬ কোটি টাকা করা হয়। ফের সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১২০ কোটি টাকা করা হয়। ১৩৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। চার লেনের বহদ্দারহাট এ ফ্লাইওভারের দুই পিলারের দূরত্ব ১৩০ ফুট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়