পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ব্যবসায়িক বন্ধন গড়বে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবেন তারা এখান থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজার ধরারও একটা সুযোগ পাবেন। আমরা সেভাবেই দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। সড়কপথ, নৌপথ, রেলপথ এবং আকাশপথ- সবগুলো যাতে উন্নত হয় তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগোযোগের একটি সেতুবন্ধন হিসেবেই গড়ে উঠবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন ও ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ৯টি খাত যেমন- অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফিনটেক, চামড়া, ঔষধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতি চাহিদা সম্পন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে- যা সময়োপযোগী। নতুন নতুন আর কী কী পণ্য আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং রপ্তানি করতে পারি সেটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। কোন কোন দেশে কী কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে- সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি কিনা? সেটাও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের যারা ব্যবসায়ী বন্ধু রয়েছেন বিশেষ করে বেসরকারি খাতে- তাদের প্রতি অনুরোধ জানাবো, এই বিষয়টার দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন। কারণ, আমাদের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের নব নব দ্বার উন্মোচিত হবে। রপ্তানি বাড়বে এবং বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করতে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোতে আমরা ২৩টি বাণিজ্যিক উইং খুলেছি। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পাদনে ২৩টি দেশের সঙ্গে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি যেমন- আঙ্কটাড, ইউএন-এস্কাপ, ইউরোপীয় কমিশন, ডি-৮, বিমসটেক, আফটা ইত্যাদি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গত তের বছরে দেশের প্রতিটি খাতে আমরা কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। আশা করি, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হব। ইতোমধ্যেই দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। সাড়ে ৪ কোটির বেশি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় এনেছি। প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় অনন্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১২ কোটি। মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করেছি। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরি শুরু হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির পথে। ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ

কাজেও আমরা বহুদূর অগ্রসর হয়েছি। আমরা এই ছোট্ট ভূখণ্ডের বৃহৎ জনসংখ্যার দেশটাতে যোগাযোগ ও কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছি। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি। করোনা মহামারির প্রতিঘাত নিরসনে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠনের শুরুতে মোট রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৮৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার- যা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে ৬ হাজার ৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রপ্তানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার- যা গত তের বছরে ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। বর্তমানে আমরা ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করছি। আমরা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩, ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধনী) আইন ২০১৩, ট্রেডমার্ক (সংশোধনী) আইন ২০১৫, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫, জাতীয় শিল্পনীতিসহ খাতওয়ারি বিভিন্ন শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা, জাতীয় উন্নয়ন ও মেধাসম্পদ নীতিমা-২০১৮, শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ প্রণয়ন করেছি। প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০ থেকে ২০২০ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসডিজি-২০৩০ এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ফলে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭৩ বছর। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়