টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সফল পাঁচ অধিনায়ক : তাইফ রহমান রাফি

আগের সংবাদ

সড়কে নেই ‘ডিজিটাল’ ছোঁয়া

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সম্প্রীতির মঞ্চে সবাই একাত্ম : ৮ দফা দাবিসহ ৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাতের আঁধার কেটে পূব আকাশে তখন সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটেছে। এর আগেই রাজধানীর শাহবাগে আসতে শুরু করে ছোট ছোট মিছিল। মিছিল করে আসা মানুষজন গোল হয়ে বসে পড়েন জাতীয় জাদুঘরের রাস্তার উপর। তাদের কারো হাতে প্ল্যাকার্ড-ফ্যাস্টুন, কেউ বা ধরে আছেন ব্যানার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হওয়া জনতার বৃত্তের পরিধিও বড় হতে থাকে। শুরুতে হিন্দু সংগঠনের প্রতিনিধিরা এলেও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আসতে থাকে প্রতিবাদী জনতা। ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে শাহবাগের এই সম্প্রীতির মঞ্চে একাত্ম হন তারা। সবার দাবি একটাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা যেন না হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গণঅনশন, গণঅবস্থান কর্মসূচির চিত্র এটি। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সকাল ৬টায় কর্মসূচি শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে গণঅবস্থান ও গণঅনশন কর্মসূচি। এরপর বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি টানা হয়। এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করেন।
শুধু ঢাকায় নয় ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একই চিত্র ছিল সেখানেও। অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সেই সঙ্গে ঘোষণা করা হয় তিন দফা কর্মসূচি। ঢাকার কর্মসূচিতে ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ আর চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত দাবি নামা উত্থাপন করেন।
৮ দফা দাবি : শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা; সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর সরকারি খরচে পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যূন ২০ লাখ টাকা

দেয়ার বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা; নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব¡ পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া; সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া; ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রæত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে করা অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
৩ দফা কর্মসূচি : দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় রেখে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন। ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত মুখে কালো কাপড় বেঁধে নিজ নিজ মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির ও মণ্ডপের ফটকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী স্লোগান সংবলিত কালো কাপড়ের ব্যানার টাঙানো।
শাহবাগের কর্মসূচি : ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন অপর এক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, ঐক্য ন্যাপের পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল, বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর, জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম নেতা এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার, সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া, ঢাবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, ঢাবির শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অরুণ কুমার প্রমুখ।
সুলতানা কামাল বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, যেখানে মেরুদণ্ডহীন একটা বিরোধী দল আছে, এককভাবে তারা সংসদ চালায়, প্রশাসন চালায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে এমন ঘটনা ঘটল কী করে? মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশের বদনাম হলো। আমরা সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। একটিও সাম্প্রদায়িক হামলার এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়নি। সরষের মধ্যেই ভূত আছে। প্রশাসনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা কাজ করে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হামলার পর আমি রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানে তারা বলেছে- ‘আমাদের মা আসবে কবে?’ প্রধানমন্ত্রী তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তাদের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সংহতি জানান। আর মুসলমানদের মধ্যে যারা হামলা করেছে, তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। প্রত্যেক মসজিদের ইমামকে বলতে হবে এগুলো অনৈসলামিক কাজ হয়েছে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, সব মানুষের, সব ধর্মসম্প্রদায়ের অধিকারের রাজনীতিটাকে ফিরিয়ে আনার মধ্যে দিয়েই আস্থা অর্জন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার মধ্যে দিয়েই আস্থা অর্জিত হবে।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা হয়েছে এর দায় রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সরকার এড়াতে পারে না। প্রশাসন এত নীরব কেনো? দেশে অশান্তি করার জন্য অপশক্তি এসব করছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায়, সেখানে এমন ঘটনা কেনো? সরকার শুধু জিরো টলারেন্সের কথা মুখে বলে, এটা মুখে বললেই হবে না।
নির্মল রোজারিও বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে রাষ্ট্রের জন্য সামনে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। এ শক্তির বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে।
সৈয়দ রেজাউল হক বলেন, দেশকে আফগানিস্তান বানানোর অসৎ উদ্দেশ্য চলছে। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সময় এসেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলিম ঐক্য পরিষদ গঠনের।
জিয়াউল হাসান বলেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার না করতে, গালিগালাজ বা কটাক্ষ না করতে। স্বাধীনতাসংগ্রামে সব ধর্মের মানুষ মিলে এ দেশ স্বাধীন করেছিল। একসঙ্গে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে তারা। এ সম্প্রীতি এখন নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ব্যবসা করে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, এটি চরম ভাঁওতাবাজি। ভাঁওতাবাজি করে রাষ্ট্র চলতে পারে না।
ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার থাকা সত্ত্বেও এর আগে রামু, নাসিরনগর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। এসব হামলার প্রতিকারে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। পরিকল্পিত না হলে পরপর বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের হামলা হতে পারে না।
চট্টগ্রামের কর্মসূচি : চট্টগ্রামের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ, ঐক্য পরিষদের নেতা শ্যামল কুমার পালিত, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, স্বভুপ্রসাদ বিশ্বাস, সুভাষ লালা, অঞ্জন কুমার দাশ, লিটন দাশ, পরিমল চৌধুরী, দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, বিজয়ল²ী দেবী, অশোক কুমার দাশ, রাধারাণী দেবী, সুচিত্রা গুহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, জাসদ নেতা ইন্দু নন্দন দে, এডভোকেট চন্দন তালুকদার, চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য এবং জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি রুবেল পাল। সমাবেশ শেষে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে আমরা সবাই সমান। আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তির সুযোগ নেই। স্বাধীন দেশে সবার অধিকার সমান। দুর্গাপূজার সময় ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে যারা হামলা করেছে, সন্ত্রাস করেছে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, জিরো টলারেন্স মুখে বললে হবে না, বাস্তবায়ন করুন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪টি মূলনীতি আছে। সংবিধানের এই ৪টি মূলনীতির একটিও এখন আর কার্যকর নেই। এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছিল। প্রধানমন্ত্রী, আপনি সেটি রেখে দিলেন কেন? আপনি প্রতিটি উপজেলায় একটি করে আদর্শ মসজিদ করেছেন। একটি মসজিদ করতে ১৫-২০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এবার উপজেলায় একটি করে মন্দির, একটি করে প্যাগোডা, একটি করে গির্জা বানান।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানবিকতা আজ বিপদাপন্ন। অসাম্প্রদায়িকতা হুমকীর সম্মুখীন। দেশে একটি সাম্প্রদায়িক হামলারও বিচার হয়নি। হামলার বিচার করুন। সারাদেশে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এ আন্দোলন বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক শাক্তির বিরুদ্ধে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে গণঅনশন ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
রংপুর : সারাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল রংপুরে গণঅনশন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি নগরীর বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
সিলেট : সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ ও গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বরিশাল : ‘ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বরিশালে প্রতীকী অনশন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটির আয়োজনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
ময়মনসিংহ : সারাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ময়মনসিংহ শাখা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়