নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

গ্রামীণ জনপদের রাস্তার ব্যাপক উন্নয়ন : রাণীনগরে প্রধান সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) থেকে : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় গ্রামীণ জনপদের রাস্তার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। উন্নয়নে পাল্টে গেল গ্রামীণ রাস্তাগুলোর চিত্র। এদিকে উপজেলার রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার প্রধান সড়কের বেহাল দশায় প্রায় ৩ বছর ধরে জনদুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, এই প্রধান সড়কের উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জনগণের এই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলাজুড়ে এলজিইডির আওতায় ৩৮৯.৬৮ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এরই মধ্যে পাকা রাস্তা ১৯২.৫৩ কিলোমিটার, এইচবিবি সোলিং রাস্তা রয়েছে ৮৯.৫৭ কিলোমিটার, সিসি রাস্তা ১.২৮ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তা রয়েছে ১০৬.৩ কিলোমিটার। এলজিইডির আওয়তায় গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন রাস্তার বেহাল দশা হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে সরকারিভাবে কয়েক মাস আগে তা মেরামত করা হয়েছে। এতে করে পাল্টে গেছে গ্রামীণ জনপদের রাস্তাগুলোর চিত্র ও গ্রাম-গঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রা।
এলজিইডি অফিস বলছে, গ্রামীণ জনপদের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকারিভাবে আগনা-বড়গাছা রাস্তা, আবাদপুকুর-মাদারতলা রাস্তা, ত্রিমোহনী জিসি গোনাহাট রাস্তা ও বনমালিকুড়ি-কাশিবাড়িসহ উপজেলাজুড়ে আরো কিছু পাকা রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। আর কয়েকটি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশার বিষয়টি আমরা জেনেছি। সেগুলো রাস্তাও মেরামত করার জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা পিআইও অফিসের আওয়াতায় উপজেলাজুড়ে গ্রামীণ প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। পিআইও অফিস বলছে, উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন গ্রামের ছোট-বড় কাঁচা রাস্তা, এইচবিবি রাস্তা, সিসি রাস্তা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়েছে।
জানা যায়, নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওয়ার রাণীনগর-আত্রাই সড়কের উপজেলা সদরের পশ্চিম বালুভরা এলাকা থেকে উপজেলার শেষে সীমানা গোনার কৃষ্ণপুর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা, সদরের স্টেশন এলাকা থেকে গোনা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের রাস্তা ও উপজেলা গোল চত্বর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তাসহ মোট প্রায় ৩৯ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে রাণীনগর-আত্রাই রাস্তার রাণীনগরের সীমানা ভালো রয়েছে। আর আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ চলমান। এদিকে বড় বড় খানাখন্দে ভরপুর হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ ২২ কিলোমিটার প্রধান সড়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর ধরে এই ২২ কিলোমিটার প্রধান সড়কটির কার্পেটিং তুলে কোনোরকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখায় রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর দিন দিন সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ফলে নিত্য দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলাবাসী। মানুষের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২২ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত এবং মজবুত পাকাকরণের জন্য গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে টেন্ডার দেয়া হয়। সড়কটি নির্মাণের জন্য কাজটি পান এক্সপেকট্রা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট ভেনচার ঢাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কাজ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র ২২ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং তুলে কোনোরকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখেন এবং আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ রাস্তার মাঝে কিছু জায়গায় পাথর ফেলেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় চলতি বছরের ৩ মে সড়কের কাজের চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলসহ ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই এই ২২ কিলোমিটার বেহাল সড়কের কাজ আর করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অনেকেই জানান, সরকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এসব ঠিকাদার ও দায়িত্বরত কর্তাকর্তাদের গাফিলতির কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত উপজেলার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ লাগব করতে এবং এই প্রধান সড়কের জনদুর্ভোগ থেকে রক্ষায় দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান বলেন, প্রধান এই সড়কটির নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিনেও শেষ করতে না পাড়ায় ঠিকাদারের গাফিতলির কারণে চলতি বছরের ৩ মে সড়কের কাজে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করাসহ ওই প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর সড়কটির কাজের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট করেছেন। এরপর নতুন ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সড়কের কাজটি বন্ধ রয়েছে। আর রিটের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। নিষ্পত্তি হলেই নতুন করে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের সরকার। এই সরকারের আমলে সারাদেশের মতো রাণীনগর উপজেলাতেও রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ জনপদের পাকা রাস্তার উন্নয়নে পাল্টে গেছে গ্রাম-গঞ্জের মানুষের জীবনযাত্রার মান। গ্রামীণ আরো কিছু রাস্তার উন্নয়ন কাজের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

প্রধান সড়কে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে এমপি হেলাল বলেন, উপজেলাবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে লাঘব করতে আমি এই সড়কের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত একটি সমাধান আসবে আর এই সড়কের কাজ শুরু হবে। এই প্রধান সড়কের কাজ শেষ হলেই উপজেলাবাসীর আরো জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়