কাগজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বিরতির পর নিজেদের প্রথম ম্যাচেই জয়ের দেখা পেয়েছে লিভারপুল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গতকাল ওয়াটফোর্ডকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে চেলসিকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে পৌঁছেছে মোহাম্মদ সালাহরা। ম্যাচের নবম মিনিটে সালাহর থেকে বল পেয়ে ওয়াটফোর্ডের জালে বল জড়ান সেনেগাল তারকা সাদিও মানে। এ গোলের মাধ্যমে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে ৩১তম ফুটবলার হিসেবে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন মানে। কোন রকম পেনাল্টির সাহায্য ছাড়াই তিনি এই মাইলফলকটিতে পা রাখেন। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর হ্যাটট্রিক ও সালাহর একমাত্র গোলে শেষ পর্যন্ত ৫-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল।
এর আগে ওয়াটফোর্ডকে তাদের ঘরের মাঠে প্রথম থেকেই চেপে ধরেন ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাব লিভারপুল। ম্যাচের ৯ মিনিটেই মিসর স্ট্রাইকার সালাহর দুর্দান্ত পাস থেকে প্রিমিয়ার লিগে নিজের শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন সেনেগাল স্ট্রাইকার সাদিও মানে। প্রিমিয়ার লিগে কোনো রকম পেনাল্টি ছাড়া এই মাইলফলক স্পর্শের তালিকায় লেস ফার্দিনান্দ ও এমিলি হেসকির পরে জায়গা করে নিয়েছেন মানে। আক্রমণে ওয়াটফোর্ডকে দিশাহারা করা লিভারপুলের দ্বিতীয় সাফল্যটি আসে ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে। জেমস মিলনারের কাছ থেকে বল পেয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনো। বিরতির পর ফের আঘাত হানেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। নিজের দ্বিতীয় গোলে দলকে ৩-০ গোলের লিড এনে দেন তিনি। এর দুই মিনিট পর ম্যাচের ৫৪ মিনিটে মিসর স্ট্রাইকার সালাহ গোল করে হালি পূর্ণ করেন। ম্যাচের ছন্দহীন ওয়াটফোর্ড শেষ ধাক্কাটা খায় ম্যাচের যোগ করা সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে দুর্দান্ত গোলে ম্যাচে নিজের হ্যাটিট্রিক পূর্ণ করেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফিরমিনো। শেষ পর্যন্ত লিভারপুল ম্যাচটি ৫-০ গোল ব্যবধানে জিতে নেয়।
এ জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে ৫ জয় ৩ ড্রয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চেলসিকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে লিভারপুল। আর ৭ ম্যাচে ৫ জয় এবং সমান এক হার ও ড্রয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে চেলসি। সমান ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ম্যানচেস্টার সিটি ও চারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশ নেয়ায় দেশে আছেন পিএসজির দুই তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র। দুই মহাতারকার অনুপস্থিতিতে দলকে একই টেনে নিয়ে গেছেন ফরাসি তরুণ ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। কেন তিনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার তার উত্তর দিয়েছেন গতকাল অঁসের বিপক্ষে ম্যাচটিতে। আন্তর্জাতিক বিরতিতে যাওয়ার আগে রেনের বিপক্ষে তিন তারকাকে নিয়েও রেনের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছিল ফরাসি ক্লাবটি। পার্ক দে প্রিন্সে গতকালও প্রায় হারতে বসেছিল মেসি, নেইমারবিহীন ফরাসি ক্লাবটি। কিন্তু সময়মতো জ¦লে ওঠে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ফরাসি বিশ্বকাপজয়ী তারকা এমবাপ্পে। পিছিয়ে পড়া দলকে ম্যাচের ৬৯ মিনিটে সতীর্থকে দিয়ে সমতায় ফেরান ২২ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ড। এরপর ম্যাচের ৮৭ মিনিটে অঁসের গোলপোস্টে বল জড়িয়ে দলকে ২-১ গোল ব্যবধানে জয় এনে দেন এমবাপ্পে। পিএসজির পরবর্তী ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্সলিগে আরবি লাইপজিকের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ শেষ হওয়ায় ওই ম্যাচে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন মেসি ও নেইমার।
ফ্রেঞ্চ লিগে টানা আট ম্যাচে জয় তুলে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছিল ফরাসি ক্লাব পিএসজি। তবে নবম ম্যাচে এসে তারা কিনা হোঁচট খেল অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল রেনের বিপক্ষে। উড়তে থাকা দলটি বিশ্বের সেরা তিন তারকা মেসি, নেইমার, এমবাপ্পেকে নিয়ে ২-০ গোল ব্যবধানে হেরেছিল। তবে লিগের পরবর্তী ম্যাচে এসে এমবাপ্পে নৈপুণ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পিএসজি। ঘরের মাঠে বল দখলে পিএসজি একচেটিয়া আধিপত্য করলেও ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটের আগে আক্রমণে দুই দল ছিল প্রায় সমানে-সমান। তবে সমতায় ফেরার পর চাপ বাড়ায় পিএসজি। যদিও তাদের ১৩ শটের মাত্র ২টি ছিল লক্ষ্যে, ২টিই গোল। আর অঁজির সাত শটের ২টি ছিল লক্ষ্যে। লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচ শেষের ১৮ ঘণ্টার মধ্যে মাঠে নামে পিএসজি। স্বাভাবিকভাবেই তাই দলে ছিলেন না মেসি-নেইমারসহ এই দুদেশের আরো কয়েকজন খেলোয়াড়। তাদের অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগে নেতৃত্ব দেন এমবাপ্পে। জয়সূচক গোল করার পাশাপাশি ও সতীর্থের গোলে অবদান রেখে তিনিই ম্যাচের নায়ক। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত পিএসজি। মাঝমাঠের কাছ থেকে আন্দের এররেরা উঁচু করে বল বাড়ান ডি-বক্সে। ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বলের কাছে পৌঁছে যান এমবাপ্পে কিন্তু ঠিকমতো ভলি করতে পারেননি তিনি। সোজাসুজি বল ধরতে কোনোরকম বেগ পেতে হয়নি গোলরক্ষককে।
সপ্তদশ মিনিটে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে মাউরো ইকার্দি ডি-বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে পিএসজি। তবে রেফারির সাড়া মেলেনি। ২৬তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে বাঁ-দিক দিয়ে স্বাগতিকদের বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন মিডফিল্ডার সোফিয়ান বুফাল। বল লক্ষ্যে না থাকায় তা যদিও ভাবাতে পারেনি গোলরক্ষক জিয়ান লুইজি দোন্নারুম্মাকে। দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ৩৬তম মিনিটে এগিয়ে যায় অঁসে। মাঝমাঠে মার্কো ভেরাত্তির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণ শানায় তারা। বুফালের ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো বল বাঁ-পায়ের শটে জালে পাঠান ফুলগিনি। অন্যদিকে ঝুঁকে থাকা দোন্নারুম্মা ঠেকানোর কোনো সুযোগই পাননি। বিরতির আগে এররেরা হেডে জালে বল পাঠালেও পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় পিএসজিকে। কারণ অফসাইডে ছিলেন স্পেনের এই মিডফিল্ডার। বিরতির পর আক্রমণে আরো ধার বাড়ান পিএসজির ফুটবলাররা। ৫৪তম মিনিটে ডি-বক্সে সতীর্থের পাস পেয়ে রাফিনহার নেয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কিছুক্ষণ পর বাঁ-দিক দিয়ে গতি ও পায়ের কারিকুরিতে প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে এড়িয়ে বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করেন এমবাপ্পে। কিন্তু জায়গামতো ছিলেন না তার কোনো সতীর্থ।
৬৮তম মিনিটে ইকার্দির উদ্দেশ্যে ক্রস বাড়ান এমবাপ্পে কিন্তু সবাইকে এড়িয়ে বল যাচ্ছিল গোলের দিকে।
ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক। ওই কর্নারেই এমবাপ্পের ক্রস ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়ে হেডে সমতা টানেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার পেরেইরা। ৮৭তম সফল স্পট কিকে ব্যবধান গড়ে দেন এমবাপ্পে। লিগ ওয়ানে চার ম্যাচ পর জালের দেখা পেলেন ফরাসি তারকা। ইকার্দির হেড ডি-বক্সে অঁসের মিডফিল্ডার পিয়ারিক কেপেলা হাত দিয়ে ঠেকালে পেনাল্টিটি পায় পিএসজি। দুই মিনিট পর আরেকটি সুযোগ তৈরি করেন এমবাপ্পে। তার ক্রসে জর্জিনিয়ো ভিনালডামের হেড গোলরক্ষক ঠেকানোর পর বল পোস্টে লাগলে ব্যবধান আর বাড়েনি। ১০ ম্যাচে ৯ জয়ে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে পিএসজি। এক ম্যাচ কম খেলা লঁস ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগামী মঙ্গলবার লাইপজিগের মুখোমুখি হবে প্রথম দুই রাউন্ডে একটিতে জয়ী