গুলিস্তানে বাস উল্টে ২ কাবাডি খেলোয়াড় আহত

আগের সংবাদ

মণ্ডপে হামলার নেপথ্যে কারা

পরের সংবাদ

আইস জব্দ হলে টাকা নেয় না মিয়ানমারের কারবারিরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইয়াবার পর ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথের (আইস) বাজার ধরতে নতুন কৌশল নিয়েছে মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা। বাংলাদেশের মাদক কারবারিদের উৎসাহিত করতে অগ্রিম টাকা ছাড়াই আইসের চালান পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। কখনো আচার, কাপড়ের প্যাকেট আবার কখনো চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেটে পাঠানো এসব চালান রাখা হচ্ছে টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে। পরে বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। আইসের চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরে ফেলে, তাহলে টাকা নেয় না মিয়ানমারের কারবারিরা। এই কৌশলের কারণে সম্প্রতি আইসের চাহিদা ও সরবরাহ বেড়েছে বাংলাদেশে।
বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ টেকনাফ আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে গতকাল ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে খোকন ও তার সহযোগী রফিককে সাড়ে ১২ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৫ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার খোকন টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। কাপড় ব্যবসা, বার্মিজ আচার ও চায়ের ব্যবসার কথা বলে অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করেন তিনি। এর আড়ালে মূলত তিনি ইয়াবা নিয়ে আসেন। গত পাঁচ বছর যাবৎ ইয়াবা কারবারে জড়িত খোকন। তবে বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি আইসের চালান আনতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার। খোকনের সিন্ডিকেটে রয়েছে ২০-২৫ জন। টেকনাফে তার পরিচিতি হোছেন নামে। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অপর ব্যক্তি মোহাম্মদ রফিক পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। এর আড়ালে তিনি মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। মিয়ানমার থেকে নৌপথে টেকনাফে আনার পর ইয়াবা ও আইসের চালান রফিকের অটোরিকশায় পৌঁছে যায় নিরাপদ স্থানে। টেকনাফে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মজুত রাখার পর সুযোগ বুঝে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চালান পৌঁছে দেন তিনি। এত তল্লাশি চৌকি থাকার পরও কীভাবে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে ঢাকায় আসছে আইসের চালান? এই প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তী সমুদ্রপথে মালবাহী বোটে করে আসছে ইয়াবা ও আইসের চালান। নিরাপদে মাদকের চালান খালাস করতে ব্যবহার করা হয় লাইট সিগন্যাল। পরবর্তীতে তারা সুবিধাজনক সময়ে বোট ভিড়িয়ে চালান খালাস করে ও টেকনাফের বিভিন্ন নিরাপদ বাসায় মজুত করে। এরপর আচারের প্যাকেট, বিভিন্ন চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেট ও বার্মিজ কাপড়ের প্যাকেটে ঢাকায় আনা হচ্ছে আইস ও ইয়াবার চালান।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকার অভিজাত শ্রেণির মধ্যে আকাচুম্বী চাহিদা রয়েছে আইসের। তাদের চাহিদা অনুযায়ীই নতুন নতুন চালান আসছে। চট্টগ্রাম হয়ে বিভিন্ন যানবাহন ছাড়াও নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করে উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য ও ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় আইস ও ইয়াবার চালান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন ও রফিক র‌্যাবকে জানিয়েছে, ইয়াবার পাশাপাশি বাংলাদেশে আইসের কারবার ছড়িয়ে দিতে কম মূল্যে আইস বিক্রি করছে মিয়ানমারের কারবারিরা। এক গ্রাম আইসের দাম তারা রাখছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় আইসে ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা। গড়ে তুলছে সুসম্পর্ক। দুই দেশের মাদক কারবারিদের মধ্যে এতটাই সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে যে, কোনোভাবে আইসের কোনো চালান
যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জব্দও হয়, তবে সেজন্য কোনো ধরনের পেমেন্ট নেয় না মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা। আর চালান গন্তব্যে পৌছে গেলে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
খন্দকার মঈন জানান, অবৈধভাবে নিয়মিত মিয়ানমারে যাতায়াত করতেন গ্রেপ্তার খোকন। মাদকের চালান খালাসের সময় মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করতেন তিনি। তার এবং রফিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়