ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত > সংবিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও দেশবাসীর উদ্দেশে যা বলেছেন, তার প্রতি যেন বৃদ্ধাঙ্গুলিই প্রদর্শন করল গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম ও চৌমুহনীর ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলো। উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর এই যে আস্ফালন, তা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সংবিধানকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলে মনে করি। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে পূজামণ্ডপে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন হামলায় মনে হচ্ছে- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সত্য, কিন্তু এখনো পাকিস্তানিদের সেই প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় ভোরের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি সমরেশ বৈদ্যর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গেই এমন মন্তব্য করেন।
স্বাধীনতার অর্ধশতক পূর্তিতেও অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ বাংলাদেশে এমন ঘটনা কেন ঘটছে বলে মনে হয়, জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত দুঃখ করে বলেন, যে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চলছে, তা থেকে বের হতে না পারলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ হবে না।
চট্টগ্রামের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর পূজা পরিষদের নেতাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না, আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।’ অথচ জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে উগ্র স্লোগান দিয়ে মিছিল বের হলো। রহস্যজনকভাবে কোনো পুলিশকে সেখানে দেখা গেল না। হামলাকারীরা নির্বিঘেœ মিছিল নিয়ে জেএম সেন হলে হামলা চালাল, পূজার তোরণ ভাঙল, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলল, মণ্ডপে ইটপাথর নিক্ষেপ করল। এই যদি পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা হয়, তাহলে বাংলাদেশে বারবার এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
দায়মুক্তির ব্যাখ্যা দিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ১৯৭২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত যতগুলো সা¤প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, সেগুলোর কোনো বিচার হয়নি। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭২-এর অক্টোবরে এই শারদীয়া দুর্গাপূজাতেই চট্টগ্রাম নগরীতেই অন্তত ১৫টি পুজামণ্ডপে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদুত মনোরঞ্জন ধরের ময়মনসিংহের বাড়ির পূজা মণ্ডপেও ভাঙচুর চালানো হলো। কোনো মামলা, গ্রেপ্তার, বিচার- কিছুই হলো না। ১৯৯০ সালে এরশাদের আমলে সারাদেশে তিন দিন, ১৯৯২ সালে বিএনপির খালেদা জিয়ার আমলে ২৭ দিন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, খুন নির্যাতনসহ নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করা হলো। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর হাইকোর্টে মামলা করা হলো। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ অন্য মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ১৫ হাজার ঘটনার একটি তালিকা তৈরি করা হলো। সাহাবুদ্দিন কমিশন গঠন করা হলো। সেই কমিশন ২০১১ সালে ৫ হাজার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের একটি বিশদ তালিকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে দিল। আমরা দেখা করলাম, তিনি আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কোনো কাজ করলেন না। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আসা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কাছেও বিচার চেয়ে দেখা করলাম। তিনিও আশ্বাস দিলেন, কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হলো না। তাই বলছিলাম ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ চলছে আমাদের দেশে।
এক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালন করছে কিনা জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের প্রতিশ্রæতি দেয়, কিন্তু তার কতটুকু কী রাখে, তাতো আপনারা দেখতেই পারছেন। আর প্রশাসনের কথা বলছেন? আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে যে কথাগুলো বলেছেন এবং জাতিকে যে বার্তা দিয়েছেন, তা কি আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ববান ব্যক্তিরা শুনেছেন? যদি ঠিকভাবে প্রশাসন শুনত বা প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দিচ্ছেন, তা সঠিকভাবে পালন করলে সাম্প্রতিক তো বটেই গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যেসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, তা ঘটত না।
তাই আজ শনিবার আমরা বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা তুলে ধরব জাতির কাছে। পরিশেষে বলতে চাই, শুধু মুখে বললেই তো হবে না, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। এর বাস্তবায়নও করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়