ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

বর্ণাঢ্য বোধন বিবর্ণ বিদায় : দেবলোকে ফিরলেন দেবী > বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরুটা রঙিন হলেও শেষ যাত্রায় তা যেন হয়ে ওঠে বিবর্ণ। অষ্টমীর দিন থেকে দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে শুরু হয় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা। এরই প্রতিবাদে ধর্মীয় রীতি মেনে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব পূজামণ্ডপে দর্পণ বিসর্জন হলেও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় হয়নি প্রতিমা বিসর্জন। একেই দেবীর বিদায়ে ভারাক্রান্ত ভক্তের হৃদয়। তার ওপর সাম্প্রদায়িকতার এই বিষবাষ্প ভক্তদের মাঝে বাড়াচ্ছে উদ্বেগ ও শঙ্কা। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এমন ঘটনার নজির খুব একটা নেই। এদিকে করোনা সংক্রমণের জন্য গত বছর এবং এ বছরও বিভিন্ন আয়োজনে ছিল বিধিনিষেধের বেড়াজাল। হয়নি বিজয়ার শোভাযাত্রা। কমতি ছিল সিঁদুর খেলার আনন্দ আয়োজনেও। তবে পূজার আয়োজনে সাম্প্রদায়িক এমন ন্যক্কারজনক হামলা শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত করেনি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। দেবীর বিদায় বেলায় তাই করোনা থেকে মুক্তির পাশাপাশি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সব অশুভ শক্তির বিনাশ করার প্রার্থনা ছিল ভক্তদের।
গতকাল সকালে বিজয়া দশমীর ‘বিহিত পূজায়’ ষোড়শপচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। ছিল পুষ্পাঞ্জলির পর্বও। তিথি অনুযায়ী, সকাল ৮টা ৫১ মিনিটের মধ্যে ‘দর্পণ বিসর্জন’ করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘দেবীকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে। এর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় দুর্গোৎসবের মূল আচার-অনুষ্ঠান। দুর্গাপূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। রীতি অনুযায়ী সধবা নারীর স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান পরে একে-অপরের সিঁথি ও মুখে মাখেন। ভক্তদের বিশ্বাস, দুর্গা আগামী বছর আবারো সঙ্গে করে শাঁখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন। সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে। তবে মহামারি পরিস্থিতিতে এবারো সিঁদুর খেলার আয়োজন ছিল না

অনেক জায়গায়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ থাকায় নামাজের সময় প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া হয়েছিল। প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় বিকাল ৪টা থেকে। এর আগে মন্দির ও মণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বিভিন্ন ঘাটে। সেখানে ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নদীর মাঝখানে। বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে শাহজাহানপুর বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ওয়াইজঘাট ছাড়াও তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারো ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রমনা কালী মন্দিরের প্রতিমা মণ্ডপে রেখে দেয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেয়া হয়। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব। ৯ অক্টোবর মহালয়ায় দেবীকে মর্ত্যে আবাহনের পর ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় বাঙালি সনাতনধর্মীদের দুর্গোৎসব শুরু হয়। দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে এসেছিলেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। বিসর্জন শেষে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার আরেকটি অঙ্গ অপরাজিতা আরাধনা। পুরাণ মতে, অপরাজিতা আরাধনা দুর্গাপুজোরই অন্য অঙ্গ। কারণ, উমা তথা দুর্গার অন্য নাম অপরাজিতা। তবে এই দেবীর মূর্তি অন্যরকম। অপরাজিতা চতর্ভূজা। হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা শোভিত, ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা সংবলিত এই দেবী নীল বর্ণা বলে পুরাণে কথিত। দেবী দুর্গার বিসর্জনের পর পুজা মণ্ডপের ইশান কোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতা লতা রেখে এই পূজা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়