ধর্ষণের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ছাত্রলীগ নেতার বিয়ে

আগের সংবাদ

বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : খাদ্যের অপচয় কমাতে হবে

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলায় আটক ৫০ : আজ আধাবেলা হরতাল

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় আজ শনিবার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ৫০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে একদল লোক জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় আটক এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ।
এদিকে হামলার পর থেকে নগরীর চেরাগী পাহাড় থেকে আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন স্থানের পূজা কমিটির নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে হামলার প্রতিবাদে প্রতিমা বিসর্জন না দেয়ার ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। একই সঙ্গে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত আজ শনিবার চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের এ পূজার আয়োজন করে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেটে একদল মুসল্লি কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করে। সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে

জেএমসেন হলের দিকে এগিয়ে যায়। মোড়ে ট্রাফিক বিভাগের বেষ্টনী দেয়া থাকলেও তারা তা ভেঙে এগিয়ে যেতে থাকে। জেএমসেন হল প্রাঙ্গণের প্রধান ফটক আগে থেকে বন্ধ থাকায় উচ্ছৃঙ্খল লোকজন গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা পূজার জন্য সড়কে থাকা মণ্ডপের গেট ভেঙে ফেলে এবং আশপাশের দেয়ালে টাঙানো বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে।
পূজামণ্ডপে হামলার সময়ে দেবী দুর্গার বিদায়ের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন বয়সি নারীরা পান, তেল, সিঁদুর দিচ্ছিলেন। হামলার পর মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে হামলাকারীরা লোহার মূল ফটকের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। হামলার সময় পূজা কমিটির লোকজন জেএমসেন হলের ভেতর থেকে এগিয়ে এলে পুলিশ তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় হামলাকারীদের কয়েকজন জেএমসেন হলের পাশ দিয়ে আর কয়েকজন চেরাগী পাহাড় দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। জেএমসেন হলে হামলার পর পূজা কমিটির নেতাকর্মীরা সড়কে অবস্থান নেন। হামলার পর পরিষদের নেতারা ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত’ প্রতিমা বিসর্জন না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। দুপুর ৩টার দিকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত জেএমসেন হলের মোড়ে এসে পূজা উদযাপন পরিষদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। জেএমসেন হল মোড়ে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, কেউ এ কর্মসূচি প্রতিহত করতে চাইলে বুকের রক্তের বিনিময়ে হলেও প্রতিরোধ করা হবে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক জানান, হামলার পর আশপাশে অভিযান চালিয়ে জড়িত সন্দেহে অন্তত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের প্রস্তুতি ছিল। হামলাকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করেছি এবং জড়িত সন্দেহে অন্তত ৫০ জনকে আটক করেছি। নামাজের পর মিছিল করার কোনো অনুমতি ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে ‘বড় ধরনের কোনো ঘটনা’ ঘটতে পারেনি।
পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, তারা পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ঘটনার সময় কার কী ভূমিকা ছিল সেগুলো নিরপেক্ষভাবে দেখা হবে। তিনি বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছি, কার কী ভূমিকা ছিল সেটাও খতিয়ে দেখতে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিও করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি বছর ১১টা থেকে বিসর্জনের কাজ শুরু হয়। এবার সরকারি নির্দেশনা ছিল নামাজের জন্য দুপুর আড়াইটার পর থেকে পূজামণ্ডপ থেকে বিসর্জনের জন্য বের হওয়ার। সেজন্য আমরা মণ্ডপে অপেক্ষা করে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করছিলাম। ঠিক এ সময় আমাদের এখানে হামলা হয়েছে।
তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মহানগর মণ্ডপের প্রতিমা সদরঘাটের নেভাল টু’তে বিসর্জন দেয়া হবে। অন্যান্য পূজামণ্ডপের প্রতিমা নিজ নিজ সুবিধাজনক স্থানে বিসর্জন দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়