কাগজ প্রতিবেদক : বর্ষীয়ান অভিনেতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন- তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আবুল হায়াত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অসীম কুমার উকিল ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নাট্যকার বৃন্দাবন দাস, নাট্যশিল্পী মীর সাব্বির, ফারুক আহমেদ, নাতাশা হায়াত, মোমেনা চৌধুরী, নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার, পিকলু চৌধুরীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংস্থা, বাঙালি সাংস্কৃতিক বন্ধন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিকবিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অধ্যাপনার পাশাপাশি ইনামুল হক নিজেকে যেভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিয়োজিত রেখেছেন, একজন অভিনেতা হিসেবে, নাট্য নির্দেশক হিসেবে, এমনকি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবনে তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। সে কারণেই ড. ইনামুল হক শুধু একজন অধ্যাপকই নন, একজন সমাজকর্মী, সমাজ সংস্কারক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশ একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে আমরা হাসতে ভুলে গেছি। ইনামুল হক মানুষকে সবসময় আনন্দ দিতেন। তিনি হাসতে শিখিয়েছেন। তার প্রস্থানে দুঃখের মধ্যে সামান্যটুকু আনন্দ কে দেবে, আমি জানি না। অভিনয় জগৎ, শিক্ষাজগৎ সর্বত্র সব মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি আমাদের কথা বলতে শিখিয়েছেন। আমি অন্তর থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
ড. ইনামুল হকের মেয়ে হৃদি হক বলেন, তিনি আসলে সবার ছিলেন। তার ভাবনায়, চিন্তায়, চেতনায় ছিল বাংলাদেশ ও মানুষ। এর বাইরে কিচ্ছু ছিল না। তিনি আমাদের সবার নাট্যগুরু, নাট্যপ্রাণ মানুষ। সারাজীবন নাটক, থিয়েটার, শিল্পচর্চার পাশাপাশি সেই গণআন্দোলনের সময় থেকে শেষদিন পর্যন্ত বাবা অনুবাদের কাজ করে গেছেন। যেই ভালোবাসা তিনি মানুষকে দিয়েছিলেন, মানুষও তাকে সেই ভালোবাসা দিচ্ছেন।
অভিনেতা ও ড. ইনামুল হকের জামাতা সাজু খাদেম বলেন, একজন দেশ প্রেমিককে আমরা হারিয়েছি, সেটা এই দেশের গ্রেট লস, আমাদের সবার লস। সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ইনামুল হকের মরদেহ দুপুর ১টায় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নেয়া হয়। এরপর বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই নাট্যজনকে।
বর্ষীয়ান এ অভিনেতা ১১ অক্টোবর সকালে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।