২৩ অক্টোবর ভোট গ্রহণ : বিএফইউজের নির্বাচনে আর বাধা নেই

আগের সংবাদ

বাঙালির মাতৃপূজা দেশমাতৃকার পূজা থেকে আলাদা নয়

পরের সংবাদ

৪০ বছরেও লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া : বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ঘাট এলাকায় নাব্য সংকট

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হেলাল উদ্দিন ও মোনায়েম খান, সিরাজগঞ্জ থেকে : উত্তরাঞ্চলের একমাত্র নদীবন্দর বাঘাবাড়ী নৌবন্দর। সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের কৃষি ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব যানবাহনের জ্বালানি তেলের জন্য একমাত্র ভরসা এই নদীবন্দর। তবে দীর্ঘ ৪০ বছরেও এর আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি এ বন্দরটিকে আরো আধুনিকায়ন এবং প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার। এদিকে অভিযোগ রয়েছে সরকারিভাবে ঘাট এলাকায় নাব্য সংকট নিরসনে কাজ করা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান না হওয়ায় অনেক জাহাজ নগরবাড়ী-আরিচা ঘাটে নোঙর করে মালামাল খালাস করে চলে যায়। ৬ শতাধিক শ্রমিকের পরিবার-পরিজনের এই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
সরজমিন বাঘাবাড়ী বন্দর এলাকা ঘুরে জানা যায়, ১৯৮১ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ একটি বন্দর হিসেবে গড়ে তোলে। প্রাথমিকভাবে তেমন কোনো উন্নত অবকাঠামো না হলেও পরবর্তীতে তা শক্ত অবস্থানে রূপ নেয়। বন্দরে আসতে থাকে উত্তরাঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সার, ডিজেলা, পেট্রলসহ বিভিন্ন পণ্য। একই সঙ্গে ক্লিংকার, চুনাপাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস হয় এই বন্দরেই।
ঘাটের শ্রমিক সর্দার শহীদ মোল্লা বলেন, আমরা ছোট কাজ করি। অতীতে বন্দরে যে পরিমাণ কাজ হতো এখন সেই কাজ অর্ধেকে নেমেছে। সরকারিভাবে ঘাট এলাকায় নাব্য সংকট নিরসনে কাজ করা হলেও বাস্তবে তা দৃশ্যমান না হওয়ায় অনেক জাহাজ নগরবাড়ী-আরিচা ঘাটে নোঙর করে মালামাল খালাস করে চলে যায়। আর বঞ্চিত হই আমরা। তার মতে ন্যায়সঙ্গত মজুরি নিশ্চিতসহ বন্দর আধুনিকায়ন করা দরকার। তিনি আরো জানান, ইজারাদার যেভাবে শ্রমিক বণ্টন করে দেন সেভাবেই চলতে হয়। আগে একজন শ্রমিক দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করত। বর্তমানে ৫০০ টাকা রোজগার করাই কঠিন হয়েছে। বন্দরের শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ ও ঘাট ইজাদার সমিতির সহসভাপতি আবুল হোসেন জানান, উত্তরাঞ্চলের একমাত্র নদীবন্দর হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তর করাসহ বন্দরে পরিবহন যাতায়াত এবং লোড-অনলোডিং সহজ করতে পুরো পোর্ট এলাকার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ জরুরি। একই সঙ্গে শ্রমিকদের বিশ্রামাগার নির্মাণসহ একাধিক গোডাউন নির্মাণ করা দরকার। বন্দরে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার রাজস্ব দেয়া হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। পক্ষান্তরে তেমন কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন হয় না। শুধু তাই নয়, বন্দরের অয়েল ডিপো, সার, দেশবন্ধু সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কয়েক কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা হয়। তিনি বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য মহামারি করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সরকারি প্রণোদনারও দাবি জানান। বন্দর শ্রমিক ইজারা সমিতির পরিচালক আব্দুল মজিদ মোল্লা বলেন, শ্রমিকদের নানা অভিযোগ সঠিক নয়। তার মতে ৪০ বছরে একাধিক নৌমন্ত্রীর দেয়া আশ্বাসের পরও কী কারণে বন্দর প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় না, সেটাই এখন প্রশ্ন। তিনি আরিচা নগরবাড়ী ঘাটের উদাহরণ টেনে বলেন, ওখানে বেসরকারিভাবে জাহাজ নোঙর করাসহ মালামাল লোড-আনলোড করা হয়। সেখানে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি চলে বিধায় পণ্যের মূল্যের ওপর শ্রমিকদের অনেক সময় কমবেশি পারিশ্রমিক দিলেও তাদের তেমন একটা ক্ষতি হয় না। কিন্তু বাঘাবাড়ীতে সেটা সম্ভব নয়। বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, আমি অল্প কিছুদিন হলো এই বন্দরে যোগদান করেছি। বন্দরের বর্তমান যে অবকাঠামো আছে তাতে আরো আধুনিকায়ন অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। এটি এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নৌবন্দর। এটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণের জন্য ইতোমধ্যে প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বন্দর এলাকাতে প্রতি বছর নাব্য সংকট ও ড্রেজিং কাজ বিষয়ে তিনি বলেন, যমুনা নদীর স্রোত বেশির কারণে পলি পড়ে। তাই স্রোতের কারণে পলির স্তর বেশি পড়ায় অনেক সময় নাব্য সংকট দেখা দেয়। ইতোমধ্যে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হলেই জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারবে। বন্দরে শ্রমিকদের নিয়ে নানা অনিয়ম বিষয়ে তিনি বলেন, ইজারাদারের বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়