২৩ অক্টোবর ভোট গ্রহণ : বিএফইউজের নির্বাচনে আর বাধা নেই

আগের সংবাদ

বাঙালির মাতৃপূজা দেশমাতৃকার পূজা থেকে আলাদা নয়

পরের সংবাদ

কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ : আদেশ বাস্তবায়ন নেই, উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বারবার তাগাদা সত্ত্বেও শুরু না করায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশ অবমাননার অভিযোগের প্রতিকার চাইতে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেতারা। নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ না হওয়ার জন্য সংগঠনটির নেতারা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তরকে দায়ী করেছেন। গতকাল সোমবার সকালে চাক্তাই খালের মোহনার কর্ণফুলীর তীরে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব বলেন, হাইকোর্টের আদেশ জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া ইজারা-হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি এ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিএস ১ নম্বর খতিয়ানের ৮৬৫১ দাগের ১৪৭ দশমিক ১০ একর জায়গা কর্ণফুলী নদী হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ নোটিস দেয়া হয় এবং মাছ বাজারকে বরাদ্দকৃত ৪ দশমিক ০২৬৩ একর নদীর অংশে নতুন মাছ বাজার গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তা উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। মাছ বাজার ও ভেড়া মার্কেট উচ্ছেদ করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের ৪ নম্বর কলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এর তোয়াক্কা না করেই নতুন মাছ বাজার চলমান রেখেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ১৫ বছরের চুক্তিনামা দিয়ে কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে। ২০১৯ সালের আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন মাছ বাজার উচ্ছেদ করা বাধ্যতামূলক ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাছ বাজার উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফকল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহ আমানত ব্রিজের মাঝ-পিলার বরাবর ২০০০ বর্গফুট নদী নতুন করে লিজ দিয়েছে, যা সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের

আদেশের লঙ্ঘন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্টদের বারবার তাগদা দেয়ার পরও হাইকোর্টের আদেশ মানা হয়নি। হাইকোর্টের রায়ের ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ নম্বর কলামে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ অনুযায়ী কর্ণফুলী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় মেট্রোর পরিচালক ওই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২০১৮ সালে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে বরফকল করার ছাড়পত্র দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এস এম পেয়ার আলী, সিনিয়র সহসভাপতি জাফর আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান দয়াল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীতে স্থাপিত মাছ বাজার ও বরফকলের চুক্তি বাতিল করতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবরে ১০ দিনের সময়সীমা দিয়ে আবেদন করা হয়। গত রবিবার ছিল ওই আবেদনের শেষদিন। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জানায়নি। একই তথ্য উপাত্ত দিয়ে গত ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে ১০ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তারাও এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি। দখলে থাকা সহ¯্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর উচ্ছেদ নোটিস দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ১ বছর ১০ মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে না জেলা প্রশাসন, যা হাইকোর্টের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে আরো বলা হয়, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় নদী ভরাট করে মাছ বাজার গড়ে ওঠায় উজানের চেয়ে ভাটির মোহনা অংশ উঁচু হয়ে গেছে বলে চুয়েট প্রফেসর ড. স্বপন কুমার পালিতের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়। যে কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি, বাকলিয়া ও পাঁচলাইশ এবং চকবাজার থানা এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়; যা চট্টগ্রাম নগরের এক-তৃতীয়াংশের সমান এলাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়