করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

রাণীনগরে সরকারিভাবে পাখি সংরক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : জেলার রাণীনগর উপজেলার পাখির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কাশিমপুর ইউপির সর্বরামপুর ও গোনা ইউপির দুর্গাপুর গ্রাম। প্রতিদিনই এই পাখি দেখতে ভিড় করছেন অনেক পাখিপ্রেমী মানুষ। আবার অনেকেই গ্রামবাসীর অজান্তে পাখি শিকার করছে। যদিও-বা কেউ পাখি শিকার করতে এলে গ্রামবাসীর তোপের মুখে অনেকেই পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীর দাবি, যদি সরকারিভাবে পাখিগুলো সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো তাহলে হয়তো বা এই দুটি গ্রাম পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হতে পারত আর নিরাপদেই হাজার হাজার পাখি এখানে প্রজনন করে বংশবিস্তার করতে পারত।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আরেকটি অপরূপ আকর্ষণ হিসেবে এই দুটি গ্রামের বড় বড় গাছে কয়েক বছর ধরে বাস করছে শামুকখৈল ও তার একাধিক প্রজাতি এবং বকসহ কয়েকটি প্রজাতির প্রায় কয়েক হাজার পাখি। সারাক্ষণ চলে ওদের ডানা ঝাপটানো ও দল বেঁধে উড়ে যাওয়া আবার গাছে পড়া। কেউ বা উড়ে যাচ্ছে খাবার সংগ্রহ করতে। আবার কেউ খাবার মুখে করে খাবার নিয়ে এসে তুলে দিচ্ছে বাচ্চার মুখে। সারা দিন চলে তাদের এমন কর্মযজ্ঞ। সন্ধ্যার একটু আগে থেকে এই অঞ্চলটি মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল-কাকলিতে। নির্বিঘেœ রাত কাটিয়ে আবার ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে উড়ে যায়। দিন শেষে আবারো তারা নীড়ে ফিরে আসে।
কিন্তু মাঝে মাঝে পাখি দেখতে আসার নামে কিছু কতিপয় ব্যক্তি সবার অজান্তেই গুলি করে পাখি শিকার করার ঘটনা ঘটছে। এতে করে ভয়ে অনেক পাখিই অন্যত্র চলে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম হোসেন, বকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, আমাদের কাছে এই পাখিগুলো বর্তমানে আমাদের পরিবারের এক সদস্যে পরিণত হয়েছে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামে প্রবেশের আগেই যদি সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ও সচেতনতামূলক কিছু পোস্টার, ব্যানার কিংবা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এই অঞ্চলকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে হয়তো-বা পাখি শিকার কমত আর আগামীতে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতির পাখিগুলো এই অঞ্চলেই প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারত।
দর্শনার্থী কাজী কামাল হোসেন, শাহরুখ হোসেন আহাদসহ অনেকেই বলেন, লোকমুখে শুনে এই পাখিগুলো দেখতে এসেছি। হাজার পাখির সমাবেশ খুব সুন্দর লেগেছে কিন্তু পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সরকারিভাবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ কামনা করছি। সঠিক পদক্ষেপই হয়তো-বা একদিন এই হাজার হাজার পাখিকে জাতীয় সম্পদে পরিণত করতে পারে।
উপজেলা প্রকৃতি ও পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও গণমাধ্যমকর্মী এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে বিলুপ্তপ্রায় এই পাখিগুলোর টিকে থাকা অনেক জরুরি। কিন্তু আমরা অনেক মানুষই নির্বিচারে বিলুপ্তপ্রায় এই পাখিগুলো শিকার করছি, যা আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। তাই এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আমি নিজে ওই পাখির অঞ্চল পরিদর্শন করব। এছাড়া এই পাখিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকেই এই সম্পদগুলো রক্ষা করতে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং এই পাখিগুলোর নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পর্যটকদের সচেতনতা, স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে হাজার হাজার পাখির নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে। যদি এই পাখিগুলো এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও আর মানুষের ভালোবাসা পায় তাহলে হয়তো-বা পাখিগুলো এখানেই তাদের ভবিষ্যৎ প্রজনন ও বংশবিস্তারের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিতে পারত এমনটাই আশা সচেতন মহলের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়