ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা : সৈয়দপুরে পূজামণ্ডপ পাহারায় মুসলমানরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : নীলফামারীর সৈয়দপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় মুসলমানরা। এটি ঘটেছে শহরের অদূরে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চান্দিনার মোড় এলাকায়। রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর ৪টা পর্যন্ত পূজামণ্ডপ পাহারা দেন এলাকার মুসলমানরা। কী কারণে পূজামণ্ডপ পাহারা দেয়া হয়

জানতে চাইলে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন, খাতিবুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আছিমুদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, পূজামণ্ডপের পাশে প্রতি বছর ১০ মহরম ইমাম হাসান ও হোসাইনের নামে মিলাদ মাহফিল এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে এলাকার দুস্থ পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয় শিরণি। ওই স্থানটিকে বলা হয় পাঁচপীরের মাজার। প্রায় দেড় মাসে আগে দোয়া মাহফিলের স্থানটিকে চিহ্নিত করতে স্থানীয় মুসলমানরা মাটি দিয়ে কবরের মতো তৈরি করে। পাশে পোঁতা হয় ইসলামী পতাকা।
ওই সব ব্যক্তি জানান, প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বংশপরম্পরায় তারা মহরমের ১০ তারিখে মাত্র একদিন ইসলামী অনুষ্ঠান করেন। এরপর সারা বছর জায়গাটি পরিত্যক্ত থাকে। কিন্তু কবরসদৃশ স্থান চিহ্নিত করায় পূজামণ্ডপের সঙ্গে জড়িত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ওই স্থান থেকে কবর সরাতে জোর প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এ নিয়ে বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
মুসলিম সম্প্রদায়ের কথার জবাব জানতে কথা হয় একই এলাকার অধিবাসী স্বরবিন্দুশীল, চিত্ত রঞ্জন সরকার, সুশীল চন্দ্র সরকারসহ একাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে। তারা জানান, প্রায় ১৫০ ধরে তারা কবরসদৃশ স্থানের পাশে দুর্গোৎসব করে আসছে। হঠাৎ করে পূজামণ্ডপের পাশে কবরসদৃশ মাজারের উদ্ভব হওয়ায় তাদের ধর্ম পালনে বাধার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা বাড়তে থাকে। এ নিয়ে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন এবং থানায় এলাকার সাত মুসলমানের নামে জিডি করেন। তবে উভয় সম্প্রদায় বলছে আমরা আতঙ্কে আছি।
দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বিনষ্ট যাতে না ঘটে তার সুরাহা করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নামেন স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম ও প্রবীণ ব্যক্তি আবুল হোসেন। এ নিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের সাতজন সাতজন করে ১৪ জন, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও তিন ইউপি সদস্য, বিশিষ্টজন আনোয়ার হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পুকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষের চারজন চারজন করে নিয়ে গঠন করা হয় জুরিবোর্ড। জুরিবোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেয় তা বৈঠকে উপস্থাপন করেন বোতলাগাড়ী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী।
বৈঠকের আয়োজক ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, বৈঠক আমার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হলেও জুরিবোর্ডকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বৈঠকের অংশীজনরাও জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে বলে অঙ্গীকার করেন। জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূজামণ্ডপের এলাকা চিহ্নিত করে সীমানাপ্রাচীর দেয়ার জন্য পূজামণ্ডপ পরিচালনা কমিটিকে অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে পূজামণ্ডপের প্রাচীর ঘেঁষে মাত্র সিকি শতক জমি পাঁচপীরের মাজারের নামে ছেড়ে দিতে করা হয় অনুরোধ। ঘোষিত এই সিদ্ধান্ত সে দিন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ মেনে নেন। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের জুরিবোর্ডের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অন্য সনাতন ধর্মাবম্বলীরা মেনে না নিয়ে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। থানায় সাতজন স্থানীয় মুসলমানের নামে জিডি করেন। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন, পুলিশের ওসি আবুল হাসনাত খান। সরকারি ওই সব কর্মকর্তা উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সুরাহা করতে পারেননি। এমন অবস্থায় স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য ইসলামের ঝান্ডাবাহী মানুষ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পূজামণ্ডপ পাহারা দিচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়